বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে নিয়োগের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করছে সংস্থাটি।
সংস্থাটির নতুন প্রধান ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রেইয়েসাস প্রথমে জনস্বাস্থ্যের প্রতি জিম্বাবুয়ের দৃঢ় অবস্থানের প্রশংসা করে মুগাবেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগের ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই তীব্র সমালোচনা শুরু হয় এ নিয়ে।
এ ঘোষণায় ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র হতাশা ব্যক্ত করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।ব্রিটেন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে, রবার্ট মুগাবেকে শুভেচ্ছা দূত নিয়োগ করার ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনেক ভালো কাজ আড়াল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, মুগাবের নিজের দেশে মানুষের অধিকারের যে অবস্থা, তাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে মনোনয়ন দেয়াটা হতাশাজনক সিদ্ধান্ত। তাদের ভাষায়, জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা মুগাবের গত ৩০ বছরের শাসনকালে ধসে পড়েছে। অনেকক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যখাতে কর্মরতরা বেতন পাচ্ছেন না। ওষুধেরও সংকট দেখা দিচ্ছে প্রায়ই।
এমন এক ব্যক্তিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে জড়ালে সংস্থাটির ঐতিহ্য ম্লান হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের বিরোধী দল ও ক্যাম্পেইন গ্রুপগুলো বলছে, এমন সিদ্ধান্ত এক ধরণের রসিকতা।
জিম্বাবুয়ের মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী ডাগ কোলটার্ট সামাজিক মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে প্রশ্ন রেখেছেন, এমন কাউকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী ভেবে এমন একজনকে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ করতে চাইছে, যিনি নিজের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিয়েছেন?
অন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরাও প্রশ্ন করেছেন, ৯৩ বছর বয়সী এক প্রেসিডেন্ট, যিনি নিজ দেশের গড় আয়ুর চেয়ে ৩০ বছরেরও বেশি সময় বেঁচে আছেন, তিনি কীভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শুভেচ্ছা দূত হন যেখানে নিজের চিকিৎসার জন্যই প্রতিবার তাকে দেশের বাইরে যেতে হয়?
এসব সমালোচনার প্রেক্ষাপটেই ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রেইয়েসাস মুগাবেকে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করে দেখার কথা জানান।
Dear @WHO
Your new goodwill ambassador presides over a collapsed health system & goes to Singapore for treatment pic.twitter.com/6rontGROXZ
— Alex T Magaisa (@Wamagaisa) October 21, 2017
তবে মুগাবের এই মনোনয়নটিকে রবার্ট মুগাবের জন্য একটি ইতিবাচক বিষয় বলে ব্যাখ্যা করেছেন তার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র মাজি-উইসা, ‘বিভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক অবরোধ আর নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশের প্রায় ভেঙে পড়া অর্থনৈতিক বাস্তবতার মাঝেও তিনি (মুগাবে) স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একজন অবিসংবাদিত নাম। বিভিন্ন রকমের কঠিন পরিস্থিতিতেও তার সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে তিনি সবচেয়ে ভালো করার চেষ্টা করেছেন।’
জিম্বাবুয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রম অবনতি এবং অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে মুগাবেকে দায়ী করে আসছে। মুগাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।