সরকারের কাছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মচারী মো. মকবুল হোসেন (৬৫)। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বার্তাবাহক ও টেলিফোন শাখায় কাজ করতেন বলে দাবি করেন।
সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের কাছে এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মকবুল হোসেন জানান, ২০০৪ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তোলার চেষ্টা করেন। ২০১৭ সালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অংশগ্রহণ করলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে ১৯৭২ সালে ভারতীয় এক ক্যাম্পে কমান্ডার ক্যাপ্টেনের দেওয়া টেলিফোন শাখায় কাজের স্বীকৃতিপত্র, ১৯৯৪ সালের ভোটার পরিচয়পত্র, ২০১৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অংশগ্রহণের কাগজপত্র দেখান।
সংবাদ সম্মেলনে মকবুল হোসেন কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন সেই কাহিনীর বর্ণনা দেন। তিনি জানান, ১৯৬২ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় কাজে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হক, গণিত বিভাগের শিক্ষক আফতাবুল রহিম, রসায়ন বিভাগের শিক্ষক জিল্লুর রহমান ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক এনায়েতুর রহমান মকবুল হোসেনসহ কয়েকজনকে মুক্তিযোদ্ধাদের বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করার অনুরোধ জানান। পরে মকবুলসহ উপাচার্য বাসভবনের মালি গেদু, বাংলা বিভাগের প্রহরী মফিজ, সাবিরুল হক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে চলে যান। ফিরে এসে তিনি ও গেদু ৭ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর অধীনে বার্তাবাহকের কাজ শুরু করেন। এ ছাড়াও, তিনি রাজশাহী অঞ্চলের টেলিফোন শাখা বিচ্ছিন্নকরণের কাজ করতেন বলে দাবি করেন।
তিনি আরও জানান, ১৮ আগস্ট মুখে করে কাগজ নিয়ে যাওয়ার সময় বিনোদপুর গেটে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মকবুলসহ কয়েকজনকে চোখ বেঁধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় অনেককে হত্যা করা হয়। এ অবস্থান সে জ্ঞান হারিয়ে পরে যান। পরদিন সকালে জেগে উঠে ভারতীয় বাহিনীর একটি গাড়ি দেখতে পান। পরে তারা মকবুলের চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করা দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মকবুল হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর সবাই কাগজ করাচ্ছিল। আমি বুঝতে পারিনি এই কাগজের এত মূল্য। কিন্তু ওই সময়ে আমার স্ত্রী ও বড় ছেলে মারা যায়। তাই ওই সকল কাগজপত্র করার মানসিকতাও ছিল না। তবে আজ আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি স্বীকৃতিটা দেয় তাহলেই আমি খুশি।’
মো. মকবুল হোসেন ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ থেকে অবসর পান। তিনি বর্তমানে নগরীর বোয়ালিয়া থানার মেহেরচন্ডী এলাকায় থাকেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে আল-আমিনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এলাকায় একটি চায়ের দোকানে কাজ করেন তিনি।