শিশুশ্রেণিতে ভর্তি হয়ে একসঙ্গেই স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলেন যমজ বোন মুক্তামনি ও হীরামনি। শিশুশ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে পর্যন্ত প্রায় দুই বছর একসঙ্গে স্কুলে যেতো দুইবোন। কিন্তু এরপরই ধরা পড়ে মুক্তামনির বিরল রোগ। মুক্তামনির জন্মের দেড় বছর পর দৃশ্যমান হওয়া ছোট মার্বেলের মতো গোটাটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় তার স্কুলে যাওয়া। একপর্যায়ে সেটি গাছের গুড়ির রূপ নিয়ে বড় হতে হতে ডান হাত শরীরের চেয়ে ভারী হয়ে উঠে। হীরামনি এবার চতুর্থ শ্রেণিতে উঠলেও স্কুলে যেতে পারেনি মুক্তামনি।
শনিবার সেটি অস্ত্রোপচার করে অপসারন করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ডাক্তাররা।
ডাক্তাররা বলছেন প্রথম অস্ত্রোপচার সফল হওয়া বাঁচানো গেছে মুক্তামনির হাত। বেড়েছে পুরিপুরি ভালো হওয়ার সম্ভাবনাও।
আশায় বুক বাঁধছেন মুক্তামনির মা আসমা খাতুন এবং বাবা ইব্রাহিমও। বোনের স্বাস্থ্যের উন্নতির সম্ভাবনা জাগায় হাসি ফুটেঠে যমজ হীরামনির মুখেও।
মুক্তামনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই মা-বাবার সঙ্গে বোনের পাশে থাকছেন হীরামনি। সঙ্গ দিচ্ছেন প্রতিমুহূর্তে।
শনিবার অস্ত্রোপচার শেষে মুক্তামনিকে রাখা হয় বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখান বারবার গিয়ে বোনকে দেখে আসছে হীরামনি। কথা বলার চেষ্টা করছে।
আইসিইউ থেকে বের হওয়ার পর হাসিমুখে হীরামনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমার বোন খুব ভালো আছে।
বোনের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হীরামনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলে: হ্যাঁ কথা হয়েছে। কিন্তু আমি চলে আসার সময় আমার হাত ধরে বললো, আপু তুই আমাকে ছেড়ে যাস না।
এবার চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে জানিয়ে মুক্তামনি বলে: আমার বোন আবার ভালো হবে। আবার আমরা একসঙ্গে স্কুলে যেতে পারবো।
মুদি দোকানী বাবা ইব্রাহিম মিয়ার আশা, সারা দেশের এত মানুষ যখন দোয়া করছে তখন মুক্তামনি ভালো না হয়ে পারে না।
ভালো হওয়ার আশা ছেড়ে দিলেও অস্ত্রোপচারের পর নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন মা আসমা খাতুন।
শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার শুরু হয়। এর আগে সকাল পৌনে আটটায় মুক্তমনিকে ওটিতে নেয়া হয়।
নয় সদস্যের এ্যানেসথিয়া চিকিৎসক সহ ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অস্ত্রোপচারে অংশ নেন।
সাতক্ষীরার মেয়ে মুক্তামনির দেহে জন্মের দেড় বছর পর একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর সেটি গাছের গুড়ির রূপ নিয়ে বড় হতে হতে ডান হাত শরীরের চেয়ে ভারী হয়ে উঠেছে। তার এই বিরল রোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয়।
১১ জুলাই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। ১২ জুলাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে লিমফেটিক ম্যালফরমেশন রোগে ভুগছে মুক্তামনি। এটি একটি জন্মগত রোগ।