মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ করেছে এবং রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
দেশটির সেনাবাহিনর দ্বারা গণধর্ষিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৫২ জন রোহিঙ্গা শিশু ও নারীর সরাসরি সাক্ষাতকার নিয়ে তৈরী করা হয়েছে ওই প্রতিবেদন।
হিউম্যান রাইট ওয়াচের জরুরি নারী অধিকার বিষয়ের গবেষক স্কাইয়ি হুয়েলার এই প্রতিবেদন তৈরী করেছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধন করতে ধর্ষণকে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের বর্বর এবং অমানবিক নিপীড়নের কারণে অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে ধ্বংসাত্মক সময় পার করছেন।
সাক্ষাতকারে অংশ নেয়াদের মধ্যে একজন বাদে প্রায় সবাই গণধর্ষণের শিকার হয়েছে বলেও আন্তজার্তিক এই মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়।
১৮ বছর বয়সী নূরশিদা জানান, তিনি খুব ভালোভাবে মনে করতে পারেন, তার সঙ্গে কী ঘটেছে। গত মাসে যখন স্কুলে ক্লাস করছিলেন তখন হঠাৎই সেখানে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিলো। এরপর সেনাপোশাক পরা কিছু মিলিটারি তাদের বন্দুক দেখিয়ে অডিটোরিয়ামে নিয়ে যায়। শুরু হয় গণধর্ষণ।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটু নিরাপদ অবস্থানে থেকে নূরশিদা বলেন, তাদের বন্দুকের ডগায় ৩০ জনের ক্লাস পুরোটাই নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ছয় জন মিলিটারির একটি দলের হাতে ধর্ষণের শিকার হন তিনি।
তিনি জানান, একজন আমাকে শক্ত করে ধরে মেঝেতে ফেলে দেয়। আমি খুব চিৎকার করছিলাম। আর একজন সেনা আমার মুখে আঘাত করলো খুব জোরে এবং আমাকে পুরো উলঙ্গ করে ফেললো। এরপর আমি একদম চুপ হয়ে গেছিলাম, আমার আর কিছুই করার ছিলো না।
স্কুলের সবগুলো মেয়েকেই ধর্ষণ করা হয়েছিলো। সবখানে সবাই উচ্চস্বরে চিৎকার করছিলো, তখনই আমরা পাশে নাইসপ্রু গ্রামে আগুন জ্বলতে দেখলাম।
নয় মাসের গর্ভবতী জান্নাত জানান, তিনিও মিয়ানমারে তার বাড়িতে সহিংসতা ও গর্ভবতী অবস্থায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
জান্নাত জানান, আর্মিরা আমাদের গ্রামে আক্রমণ করার ৫ দিন আগে আমার স্বামী মারা যায়। এরপর নিজের তিনটি সন্তানকেও হারিয়ে ফেলেন তিনি। ফকিরা বাজার গ্রামে যখন আর্মিরা আসে তখন তিনি একা ছিলেন।
‘সবাই যখন জঙ্গলে পালাচ্ছিলো তখন আমিও লুকিয়ে পড়ি । কিন্তু কিছু আর্মি বাড়ির দরজা ভেঙে ঢোকে। তারা আমাকে গর্ভবতী দেখেও ধর্ষণ করে।’
সবশেষে তিনি আহত, উলঙ্গ হয়ে পড়ে ছিলেন, কিন্তু সন্তানগুলোর কেউই আর ছিলো না। অনেক চিৎকার করে, অনেক খোঁজাখুজি করেও আর তাদের খুঁজে পায়নি।’