রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় কোনোভাবেই মিয়ানমার এড়াতে পারে না এবং রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা চলবে বলে জানিয়ে মিয়ানমারের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। গাম্বিয়ার তথ্য-প্রমাণের বিপরীতে মিয়ানমার যথেষ্ট যুক্তি তুলে ধরতে পারেনি বলেও অন্তর্বর্তী আদেশে আদালত জানিয়েছে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতন গণহত্যার শামিল বলে মন্তব্য করে আইসিজে বলেছে: গাম্বিয়ার দাবি যথাযথ। রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় কোনোভাবেই মিয়ানমার এড়াতে পারে না।
আইসিজে আরও বলেন: রাখাইনের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পর্ক বহুবছরের। কিন্তু সেখানে সেনাবাহিনী দ্বারা জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এই অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতের রয়েছে।
আদালত যোগ করেন: ২০১৭ সালে রাখাইনে বেসমারিক নিরাপত্তায় ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার। জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী কোনো রাষ্ট্র বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। এক রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। সেই সঙ্গে মামলার বিচার কাজে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন বিচারিক আদালত।
এর আগে ২০১৯ এর ডিসেম্বরে গাম্বিয়ার করা মামলায় নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে গণহত্যার কথা অস্বীকার করেছিলেন মিয়ানমার নেতা অং সান সু চি।
মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে অভিযোগে গত বছরের ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট এই মুসলিম দেশটি।
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে অভিযোগে ওই মামলা করা হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এ নিয়ে শুনানি শুরু হয়। সেদিন গাম্বিয়ার পক্ষে মামলায় প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। ওই শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারক সোমালিয়ার নাগরিক আব্দুলকায়ি আহমেদ ইউসুফ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান।
এতে ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ এনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইনের বৃদ্ধি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। ওই গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি।
আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ‘অন্তর্বর্তী আদেশ’ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানায় গাম্বিয়া। তবে মামলার চূড়ান্ত রায় পেতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরের দিন শুনানিতে অংশ নিয়ে মিয়ানমারের নেত্রী শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং আদালতের এ বিষয়ে শুনানি করার এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের মুখে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।