চলতি বছরের ডিসেম্বরেই মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গার্মেন্টস পল্লীর অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ।
বুধবার রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। এ সময় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন (বিজিএমইএ) এর মধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি গার্মেন্টস পার্ক স্থাপনে ৫শ একর জমির লিজ গ্রহণে একটি সমঝোতা চুক্তি সাক্ষর করা হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের হাতে এই স্মারক তুলে দেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। এ সময় জমির মূল্য হিসেবে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ২৫ কোটি টাকার একটি চেক দেওয়া হয় বেজাকে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব শুভাশীস বসু, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, রপ্তানিকারক সংগঠন ইএবির সভাপতি সালাম মুর্শেদী প্রমুখ।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের জিডিপির অধিকাংশই আসে বেসরকারি খাত থেকে। বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে সরকার সব ধরনের সুবিধা দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল মিরসরাইতে পোশাক উদ্যোক্তাদের জমি বরাদ্ধ দেয়াসহ সব ধরনের সহায়তা দিবে সরকার। আশাকরি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সেখানে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
পবন চৌধুরী বলেন, মিরসরাইতে পোশাক কারখানা পল্লী স্থাপনে বিজিএমইএকে ৫শ একর জমি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনন্ত গ্রুপসহ পোশাক শিল্পের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ৩শ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএর জন্য আরও ৭০০ একর জমি স্টকে রাখা হয়েছে।’
দেশের পোশাক রপ্তানি বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদিও আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক হিসাবে দাবি করি। কিন্তু প্রথম রপ্তানিকারক দেশ চীন থেকে কয়েকগুণ পিছিয়ে রয়েছি। চীনের রপ্তানি ১৭০ বিলিয়ন ডলার আর আমাদের মাত্র ২৮ বিলিয়ন ডলার। অতএব এই খাতের উন্নয়নে বেজা সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তত।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানায় উৎপাদন শুরু করার জন্য নীতিগত সহায়তা, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অবকাঠামোর উন্নয়ন বেজা কাজ করছে। শুধু তা-ই নয় মিরসরাই অঞ্চলে জমির প্রকৃত দামের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ দামে বিজিএমইএকে জমি দেয়া হলো।
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, মধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার পর অনেক চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ আসবে। তবে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুবিধাগুলো আদায় করে নিতে হবে।
ব্যবসায়ীদের আরো বেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে যত বেশি যুক্ত হবে দেশের অর্থনীতি তত বেশি সমৃদ্ধ হবে।
মিরসরাইতে দ্রুত জমি বরাদ্ধ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হোঁচট খেতে পারে।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি লোক তৈরি পোশাক খাতের সাথে যুক্ত রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতসহ প্রয়োজনীয় সব সহায়তা পেলে তৈরি পোশাক ও এর সংশ্লিষ্ট খাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় ৫ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
সালাম মুর্শেদী বলেন, দেশকে এগিয়ে নেয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা ব্র্যান্ডিংয়ের অভাব। কারণ অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের হিসাবে বাংলাদেশে বর্তমানে ৪ হাজার কারখানার কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে; যা বিশ্বের কোনো দেশে নাই।
তাই বিশ্ববাসীকে এসব অর্জন জানিয়ে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া দরকার বলে জানান তিনি।