ইউক্রেনীয় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ‘মিথ্যাচারের’ প্রতিবাদে ইরানের রাজধানী তেহরানের রাজপথে বিক্ষোভ চলছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সিনিয়র নেতাদেরর পদত্যাগ দাবি করছেন বিক্ষোভকারীরা।
৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চরম উত্তেজনার পরিস্থিতিতে ইরানে উড়োজাহাজ উড্ডয়নের অনুমতি কেন দেয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিক্ষোভে। উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
আল-জাজিরা জানায়, শনিবার তেহরানের আমির কবির ইউনিভার্সিটির সামনে শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ’ মানুষ ইউক্রেনীয় উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন। সন্ধ্যা নাগাদ তা বিক্ষোভে রূপ নেয়।
টুইটারে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা খামেনি ও সংশিষ্ট অন্যান্যদের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দিচ্ছেন। একই সঙ্গে ‘মিথ্যাবাদী’দের প্রতি নিন্দা জানিয়ে উড়োজাহাজ ভূপাতিত হওয়া এবং পরে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করার জন্য দায়ীদের বিচার চাইতে দেখা গেছে ভিডিওচিত্রে।
বিবিসি জানিয়েছে, আমির কবিরসহ আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চলমান বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টাও চালায় পুলিশ।
বুধবার ইরানের তেহরানে ইমাম খোমেনি বিমানবন্দরের কাছে ১৮০ যাত্রী ও ক্রু নিয়ে ইউক্রেনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। বিমানবন্দর থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উদ্দেশে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বোয়িং ৭৩৭-৮০০ জেট উড়োজাহাজটি তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে পারান্দের কাছে বিধ্বস্ত হয়।
এ ঘটনায় উড়োজাহাজে থাকা সবাই নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা দুর্ঘটনার জন্য ইরানের ভুলে ছোড়া রকেট বা মিসাইলকে দায়ী করে আসলেও এ পর্যন্ত বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল দেশটি।
তবে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষে ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা চালানোর ওই সময়টাতে ‘ভুল করে’ দুর্ঘটনা ঘটানোর কথা স্বীকার করে ইরান।
সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতির বরাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল শনিবার জানায়, ইউক্রেনীয় ওই জেটলাইনারকে লক্ষ্য করে বুধবার ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’ একটি মিসাইল ছোড়া হয়েছিল। ইরানের বিশেষ সামরিক বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডসের একটি স্পর্শকাতর ঘাঁটির খুব কাছ দিয়ে প্লেনটি উড়ে যাচ্ছিল বলে একে ‘শত্রুভাবাপন্ন লক্ষ্যবস্তু’ মনে করে ‘মানবিক ত্রুটিবশত’ মিসাইলটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
যাদের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
শুধু সামরিক বাহিনীর বিবৃতি নয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির টুইটার পেজেও একটি পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। সেই টুইটবার্তাটি রিটুইট করে এর জন্য গভীর শোক ও আফসোস জানান রুহানি।
The Islamic Republic of Iran deeply regrets this disastrous mistake.
My thoughts and prayers go to all the mourning families. I offer my sincerest condolences. https://t.co/4dkePxupzm
— Hassan Rouhani (@HassanRouhani) January 11, 2020
শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে ফোনে কথা বলেও এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চান তিনি।
তেহরানের বিক্ষোভে ট্রাম্পের সমর্থন
তেহরানে চলমান বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইংরেজি এবং ফার্সি- দুই ভাষায় লেখা টুইটবার্তায় তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের পাশে রয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেছেন: ‘চলমান গণবিক্ষোভের মধ্যে থেকে বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সবাইকে জানানোর ইরান সরকারের মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে দেশে ঢুকতে দিতে হবে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর আরেকটি হত্যাকাণ্ড হতে দেয়া যাবে না। ইন্টারনেটও বন্ধ করতে দেয়া যাবে না। পুরো বিশ্ব কিন্তু দেখছে।’
The government of Iran must allow human rights groups to monitor and report facts from the ground on the ongoing protests by the Iranian people. There can not be another massacre of peaceful protesters, nor an internet shutdown. The world is watching.
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) January 11, 2020
বিক্ষোভকারীদের সাহস দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বিক্ষোভ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি।