একুশ মানে শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। বরং একুশের চেতনাকে ধারণ করা এবং তার সাথে পরবর্তী প্রজন্মকে পরিচিত করানো।যদিও আজকাল আমাদের মাঝে পশ্চিমা সংস্কৃতির চর্চা অনেক বেশি চলছে, আর লোপ পেতে চলেছে একুশের চেতনা। শিশুরা ইংরেজিতে কথা বলতে না পারলে সোসাইটিতে যেন মান থাকে না। কিন্তু এসবের মাঝেও এমন কোন ঘটনা থাকে যা দেখে থমকে দাঁড়াতে হয়।
রাজধানীতে একুশ উদযাপন দেখে ফেরার পথে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পথ ধরে হাঁটছিলাম। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের ঠিক বিপরীত পাশে এক মা তার সন্তানকে একুশে ফেব্রুয়ারি কী, তা বোঝাচ্ছিলেন। বাচ্চাও বেশ মনোযোগ দিয়ে মাকে শুনছিল আর একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছিল। মা-ছেলের এই কথোপকথন খেয়াল করে এগিয়ে গেলাম তাদের সাথে কথা বলতে। পরিচয় দিতেই তিনি বললেন, ‘বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে এসেছি, অনুষ্ঠান আছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলে বা পাঠ্য বইয়ে একুশ সম্বন্ধে জানার সুযোগ থাকলেও এক্ষেত্রে পরিবার বিশেষ করে মায়ের ভূমিকা বেশি থাকা প্রয়োজন। একজন মা-ই পারেন তার সন্তানকে প্রকৃত জাতীয় চেতনা বোধসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে।’
তিনি বলেন, একুশের অনুষ্ঠানে সন্তাকে নিয়ে এসেছি, কিন্তু একুশ কী, তা যদি সে না জানে, সেটা তো আমাদেরই ব্যর্থতা। তাই বাচ্চাদের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সেই দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝানো প্রয়োজন। বাচ্চাকে ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি করিয়েছি তাতে কি! আমি ওকে সবসময় বাংলার শেকড়ে ধরে রাখতে চেষ্টা করি। তাই শুধু একুশ নয় বরং বাঙালির সব ঐতিহ্যর সাথে তাকে প্রতিনিয়ত পরিচয় করিয়ে দিই।’
এবার বাচ্চাকে একূশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে সে সহজেই বলতে পেরেছে একুশ কী আর কেন এখানে এসেছে। সে তার আধো আধো ভাষায় বলল, ‘আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। স্কুলে শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসেছি।’
ভাষা শহীদদের নাম জিজ্ঞেস করতেই সে বলল রফিক, সালাম আর বরকতের নাম।