ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। একমাস আগেই ঘোষণা হয়ে গেল দল। ১৫ জনের মধ্যে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নেই। নিজেকে ফিট দাবি করলেও ‘ইনজুরি’ অজুহাতে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে না পারা এ পেসারের জন্য অনন্ত এক আক্ষেপ। নির্বাচকদের দল ঘোষণার সেই দিনটির কথা স্মরণে এলে আজো আবেগ লুকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে ম্যাশের।
দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে না পারা চরম আক্ষেপের হলেও মাশরাফী এখন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন একদমই ভিন্ন এক কারণে। তিনি বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে তার স্ত্রী সুমনা হক সুমি বেঁচে নাও থাকতে পারতেন!
তামিম ইকবালের ফেসবুক লাইভ শো’তে শনিবার নিজেদের মধ্যে আড্ডায় প্রসঙ্গক্রমে মাশরাফী জানালেন, ‘২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ছিল সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে। আগের রাতে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল আমার স্ত্রী। রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। বাংলাদেশের ম্যাচের দিনই হয় অপারেশন। হুমায়রা (মাশরাফীর প্রথম সন্তান) জন্মের আগে সুমিকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করা হয়েছিল। খেলা নিয়ে যদি ব্যস্ত থাকতাম, হয়ত সময়মত হাসপাতালে নিতে পারতাম না। যা হয় সবসময় ভালোর জন্যই হয়।’
বিশ্বকাপের আগে মাশরাফীর হাঁটুর অস্ত্রোপচার যিনি করেছিলেন, সেই অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ডেভিড ইয়াং মাশরাফীকে বলেছিলেন খেললে লিগামেন্ট আবারও ছিঁড়ে যেতে পারে। তারপরও খেলার ঝুঁকি নিতে চেয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
খেলবেন বলেই নিজেকে তৈরি করে যাচ্ছিলেন মিরপুরের একাডেমি মাঠে। ফিটও হয়ে উঠেছিলেন পুরোপুরি। তবে একটি ভুল বোঝাবুঝি আর কিছু অজানা কারণে মাশরাফীকে স্কোয়াডে রাখেনি রফিকুল আলমের নির্বাচক কমিটি।
ভুলটা করেছিলেন তখনকার ফিজিও মাইকেল হেনরি। ডেভিড ইয়াংয়ের রিপোর্ট পুরোপুরি না পড়েই বিসিবিকে জানিয়ে দেন মাশরাফী খেলার অবস্থায় নেই। ইয়াংয়ের মেইলের উপরের অংশ পড়েই নিয়ে নেন সিদ্ধান্ত। কম্পিউটারে রিড মোর অপশনে ক্লিক করলেই হয়ত জানা যেত মাশরাফী যদি ঝুঁকি চায়, আত্মবিশ্বাসী থাকে তবে খেলতেও পারবে। পরে মাশরাফীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন মাইকেল। ততক্ষণে নাম কাটা পড়ে গেছে বিশ্বকাপ দল থেকে। ৯ বছর ধরে অজানা থেকে যাওয়া তথ্যটি দিলেন মাশরাফী নিজেই।
তামিমের লাইভ অনুষ্ঠানের অন্যদুই অতিথি মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানান, মাশরাফীকে বিশ্বকাপ দলে না দেখে তারাও ধাক্কা খেয়েছিলেন। মুশফিক বলেন, অবস্থা যা ছিল মাশরাফী ভাই ২০১১ বিশ্বকাপ খেলা ডিজার্ভ করতেন। মাহমুদউল্লাহ বলেন, মাশরাফী তখন বিসিবিতে আসতেন মাঝে মাঝেই চোখ লাল দেখতাম।
এটুকু বাদ দিলে তামিমের লাইভ শো’র শেষপর্ব হয়েছে অসাধারণ। বাংলাদেশের চার সিনিয়র ক্রিকেটার দিয়েছেন প্রাণখোলা আড্ডা। করোনাকালে মানুষকে একটু বিনোদন দিতেই বর্তমান-সাবেক তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে আড্ডার আয়োজন করেছিলেন তামিম। শনিবার রাতে হয়ে গেল শেষ আড্ডাটি। যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সাকিব আল হাসানকেও। ব্যক্তিগত কারণে তিনি যুক্ত হতে রাজি হননি। তামিম সেটি আগেই ভক্তদের জানিয়ে দেন।