দুয়ারে বিশ্বকাপ। তার আগে নিজেদের শক্তি-দুর্বলতার জায়গাগুলোর সাথে শেষবার বোঝাপড়ার সুযোগ। শক্তির দিকগুলো আরও শানিয়ে নেয়ার সুযোগ যেমন, দুর্বলতার স্থানগুলো খুঁজে নিয়ে তাতে উপশম টেনে মাঠের পরফরম্যান্সে রূপান্তর করার চ্যালেঞ্জ।
বিদেশের মাটিতে সাফল্য খুঁজে নিতে কন্ডিশনজুজু কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ তো আছেই। আছে কিছু জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়ার পথ তৈরি করার চ্যালেঞ্জও। আর এসবকিছুর ইতিবাচক ফল নিজেদের দিকে আনতে ত্রিদেশীয় সিরিজে দারুণ কিছুই করে দেখাতে হবে বাংলাদেশকে।
আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ম্যাচ হয়ে গেছে একটা। তাতে পৌনে চারশ রানের সংগ্রহ গড়ে ১৯৬ রানের জয় তুলে স্বাগতিকদের শক্তি দেখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেই নিজেদের প্রথম ম্যাচে মঙ্গলবার নেমে পড়বে মাশরাফীর দল। ম্যাচ শুরু দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে।
ডাবলিনের এই ম্যাচে নামার আগে খুব বেশি সুখস্মৃতি সঙ্গী হচ্ছে না বাংলাদেশের। দেশের বাইরে সবশেষ সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো জয় নেই। গতকাল আয়ারল্যান্ড ‘এ’র দলের কাছে ঝালিয়ে নেয়ার ম্যাচেও দেখতে হয়েছে ৮৮ রানের বড় পরাজয়।
অবশ্য আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেননি একাদশের অনেক নিয়মিত মুখই। অধিনায়ক মাশরাফীই খেলেননি। সৌম্য, মোস্তাফিজ, সাইফউদ্দিনরাও বাইরে ছিলেন। তবে সেটা অজুহাত হতে পারে না এমন হারের।
আয়ারল্যান্ড মূল দলকে যখন ব্যাটে-বলে বিধ্বস্ত করে দারুণ জয়ে মাঠ ছেড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, একই সময়ে ক্যারিবীয়দের পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ কিনা ওভাবে হেরে বসল আইরিশদের ‘এ’ দলের কাছেই। সেটা ৩০৮ রানের পুঁজি তাড়ায় নেমে ২১৯ রানে অলআউট হয়ে। মূল লড়াইয়ে নামার আগে বিষয়টা খানিক ভাবনারই!
ডাবলিনে আসল লড়াইয়ে নামার সময় তাই সঠিক কম্বিনেশন, আর পরে মাঠের দাপটে নিজেদের খুঁজে পেতে হবে তামিম-সাকিবদের। তিনশ পেরোনো রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ কিছুটা ব্যক্তিগত সাফল্য অবশ্য দেখেছে। টেনেটুনে মাত্র দুইশ পার করার ইনিংসে তামিম ও লিটন জুটিতে ৫৬ রানের ভালো শুরুই করেছিলেন। মূলমঞ্চে তাদের ইনিংস টেনে নেয়ায় মন দিতে হবে।
চোট-পুনর্বাসন শেষে অনেকদিন পর ফেরা টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ব্যাটে-বলে আত্মবিশাসী থাকা দলের জন্য ইতিবাচক। ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রানে এক উইকেট, সঙ্গে ইনিংসে কেবল তার নামের পাশেই বলার মতো একটা ফিফটি। ৪৩ বলে ৫৪ রানের ইনিংস, দলের জন্য স্বস্তিরই।
বাকিরা রোববার আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। তবুও পরীক্ষিত মুশফিক, গত নিউজিল্যান্ড সিরিজে সতীর্থদের চরম ব্যর্থতার সময় দুটো ফিফটি করা মিঠুন, সেঞ্চুরি করা সাব্বির, স্পিন-ব্যাটে জ্বলে ওঠার সামর্থ্য রাখা মিরাজ, দুঃসময়ের কাণ্ডারি মাহমুদউল্লাহ, দেশে ঘরোয়া ওয়ানডে লড়াইয়ে টানা শতক- এক সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরি করে যাওয়া সৌম্য নিজেদের দিনে যেটা করে দেখানোর সামর্থ্য রাখেন, সেটা ভরসা দেবে বাংলাদেশকে।
আইরিশদের দ্রুত থামিয়ে দিতে মোস্তাফিজ, গত কয়েকমাস দারুণ সময় কাটানো সাইফউদ্দিন, দলনেতা মাশরাফী ভূমিকা রাখতে পারেন বলে। চোট কাটিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে ফেরা রুবেল ২টি উইকেট নিয়ে জানান দিয়েছেন স্বস্তির। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকলেও আইরিশ সফরের দলে থাকা তাসকিন ৩ উইকেট নিয়ে দাবি জানিয়ে রেখেছেন একাদশে ঢোকার। এসব ইতিবাচক দিক সঙ্গী হচ্ছে নেমে পড়ার সময়।
আরেকটা বিষয় বেশ ভালো করে উদ্দীপ্ত করতে পারে বাংলাদেশকে, সেটা উইন্ডিজের বিপক্ষে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। ঘরের মাঠে গত ডিসেম্বরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ। তার আগে গত বছরের জুলাইয়ে উইন্ডিজের মাটি থেকেও তিন ওয়ানডের সিরিজ জিতে এসেছে মাশরাফীর দল। সেবার টি-টুয়েন্টি সিরিজেও জিতে ফেরে সাকিবের দল। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দেখানো এই দাপুটে সাফল্যই টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া দেবে।
বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ প্রস্তুতির মঞ্চ ধরা হচ্ছে প্রায় একই কন্ডিশনের আয়ারল্যান্ডকে। সেখানে ত্রিদেশীয় লড়াই। বিশ্বকাপ আরেকটু সামনেই। ত্রিদেশীয় সিরিজের তার ভালো একটা প্রস্তুতি সুযোগও নিশ্চয় হাতছাড়া করতে চাইবে না বাংলাদেশ। আর সেজন্য জিততে হবে বহুমুখী চ্যালেঞ্জই।