মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় গত কয়েকদিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছে। এসব অভিযানে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ ও র্যাবের দাবি: নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে মামলাও রয়েছে।
মাদক নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান যেমন সাধুবাদ দাবি করে, তেমনি কথিত বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু কিছু প্রশ্নও তৈরি করেছে।
মাদক হচ্ছে সর্বগ্রাসী এক নেশা যা একেবারে উপর থেকে নিচে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদক চোরাচালানের গডফাদার, যারা সীমান্ত দিয়ে এসব প্রবেশ করতে দেয়, যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যুক্ত থেকেও এই ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করে; মাদক নির্মূলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা জরুরি। একইসঙ্গে স্থানীয়ভাবে গজিয়ে ওঠা কারখানাগুলোও ধ্বংস করতে হবে।
আমাদের মনে রাখেতে হবে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কিছু মাদক বিক্রেতাকে শাস্তি দিলেই মাদক নির্মূল হবে না। রাষ্ট্রীয় বিচার কাঠামোর আওতায় এনে যারা এই ব্যবসার মূল হোতা তাদেরও বিচার করতে হবে।
সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ নেই, কিন্তু আমরা এর পরিপূর্ণ সফল সমাপ্তি দেখতে চাই। কিন্তু, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কোনো সমাধান নয়।
এজন্য প্রয়োজন যুব সমাজকে আরো নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা, বেকারত্ব দূর করা। এই ব্যবসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী ও শীর্ষ সহযোগীদের সনাক্ত করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে মাদক নির্মূল অনেকাংশে সম্ভব। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা শুধু খুচরো বিক্রেতার ঠিকানা বদলাতে পারে। মাদক নির্মূল তো দূরের কথা, নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হবে না। এটা কালো পুঁজির নিয়মানুসারে চক্রাকরে ঘটতেই থাকবে।
আমরা মাদক নির্মূলে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে যেমন আশাবাদী, তেমনি মনে করি দু’-চারজন খুচরো ব্যবসায়ীকে মেরে সর্বগ্রাসী মাদক রোধ করা সম্ভব নয়। আশা করি, সরকার এর গভীরে ঢুকে অভিযান চালাবে, অন্যথায় অন্তসার শূন্যতায় পর্যবসিত হবে এইসব অভিযান।