২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ নামে যৌথ বাহিনীর এক অভিযান পরিচালিত হয়। ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ নামক ওই অভিযানে সন্ত্রাসী নামক মানুষ মারা যেত হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে। প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের তথ্যমতে, অপারেশন ক্লিনহার্টে ৪৫ থেকে ৫০ জন নিহত হয়েছিল৷ আর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুয়ায়ী ক্লিনহার্ট অভিযানে নিহত হয়েছিল কমপক্ষে ৬০ জন৷
২০০৩ সালের ওই অভিযানের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তি দিয়ে সেসময় সংসদে একটি আইনও পাশ হয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় যাবার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। সে সময় খালেদা জিয়ার সরকার যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে ওই অভিযান শুরু করে, যা দেশসহ সারাবিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রশ্নের মুখে পড়ে। পরে হাইকোর্টের আদেশে সংসদে পাশ করা আইনও অবৈধ ঘোষিত হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এই অভিযান চলাকালে মাদক ব্যবসায়ী ও সে সংক্রান্ত অনেকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও নিজেদের মধ্যে কথিত হানাহানিতে নিহত হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে (২৮ মে) এখন পর্যন্ত নিহত ৯২ জন। ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও মদসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ-র্যাব। চলমান এই অভিযান অনেককে সেই অপারেশন ক্লিনহার্টের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।
দেশের মাকদসেবীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে ও অবৈধ এই কারবারে দেশের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পাচার হওয়াতে সরকারসহ সারাদেশের জনগণ চিন্তিত। এই অবস্থায় প্রথমদিকে অনেকে এই অভিযানকে একটি অগ্রগতি হিসেবে নিরবে মেনে নিলেও ধীরে ধীরে অভিযানে হতাহতদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায়। সার্বিক বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একরামুল হক (৪৬) নিহত হবার পরে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক উপজেলা সভাপতি ছিলেন। নিহত একরামুল হক তিনবার পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হযন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিহত ওই ব্যক্তি সর্ম্পকে প্রথমে অনেক নেতিবাচক তথ্য প্রকাশ হলেও ধীরে ধীরে তার সর্ম্পকে অন্য তথ্য বের হয়ে আসছে। নিহত একরামুল হক স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় এবং অর্থ-সম্পদের বিচারের খুবই সাদাসিদা ছিলেন বলেও জানা যাচ্ছে। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের আক্রোশের শিকার বলেও বলছেন কেউ কেউ। বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককে।
দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদক প্রবেশ করছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে মাদকের গডফাদার ও ব্যবযায়ীদের নাম-বিস্তারিতও উঠে এসেছে। আমাদের ধারণা, সারাবছর সঠিক আইনি পথে তাদের বিরুদ্ধে অনেকবছর আগেই ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি এ পর্যায়ে যেত না। আর ঘটা করে এ ধরণের অভিযান পরিচালনা করার দরকার পড়তো না, যা কিনা সেই ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ এর মতো প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। অবশ্যই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টরালেন্স নীতিতে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কিন্তু এই ধরণের অভিযানে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আইন পরিপন্থী কিছু যেন না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা খুবই জরুরি।