চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের কয়েকটি জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় ১২ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। তারা সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে পুলিশ ও র্যাব। শুক্রবার দিবাগত রাতে এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
অভিযানে কুমিল্লায় ২ জন, চাঁদপুরে ১ জন, দিনাজপুরে ১ জন, বরিশালে ১, জয়পুরহাটে ১, পাবনায় ১, কুড়িগ্রামে ১, ময়মনসিংহে ১ এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১ জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও দিনাজপুর ও বরগুনার কোমরাখালীতে মাদক ব্যবসায়ীর দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ২ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বন্দুকযুদ্ধে এসব ঘটনায় পুলিশ ও র্যাবের কয়েকজন সদস্যরা আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কুমিল্লা
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বাবুল (৪০) ও আলমাস (৩৫) নামে দুই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত ২টায় উপজেলার বাগড়া-রামচন্দ্রপুর সড়কে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। বন্দুকযুদ্ধে কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দেবীদ্বার সার্কেল) শেখ সেলিমসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান কবীর বলেন: ‘নিহত বাবুল ও আলমাস এ এলাকার চিহ্নিত ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে তারা এলাকায় মাদকের বিস্তার ছড়িয়ে আসছে।’
বাবুলের বিরুদ্ধে ১৬টি এবং আলমাসের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাবুল ও আলমাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে দু’জনকে নিয়ে রাত দুইটার দিকে মাদক উদ্ধার ও অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে পুলিশ।
‘পুলিশের সদস্যরা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া-রামচন্দ্রপুর সড়কের এলাকায় আসলে বাবুল-আলমাসের সহযোগী অপর মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের বন্দকযুদ্ধ শুরু হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে বাবুল ও আলমাসের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।’
ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয় বলে জানা গেছে।
চাঁদপুর
চাঁদপুরের কচুয়ায় পুলিশের ক্রসফায়ারে বাবলু (৪২) নামে একজন নিহত হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি সে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও তার বিরুদ্ধে বহু মামলা আছে।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, কচুয়া উপজেলার ১১নং দক্ষিণ গোহাট ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রাম থেকে বহু মামলার আসামি ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বাবলুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার পথে একই উপজেলার ১০নং উত্তর গোহাট ইউনিয়নের ব্রিক ফিল্ডের কাছে আসলে বাবলুর সহযোগীরা পুলিশের উপর হামলা চালায় ও ককটেল নিক্ষেপ করে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের সাথে গোলাগুলি হয়। এ সময় বাবলু গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলে তাকে দ্রুত কচুয়া হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাবনা
পাবনা সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আব্দুর রহমান নামের একজন নিহত হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, নিহত ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী। বন্দুকযুদ্ধের সময় মাদক ব্যবসায়ীদের ছোড়া ককটেলের আঘাতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।
আব্দুর রহমান পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি পুলিশের।
পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মহেন্দ্রপুরের দুর্বার সবুজ গোষ্ঠীর পাশে মাদকবিরোধী অভিযানে যায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ২০/২৫ রাউন্ড গুলি ও ককটেল হামলা চালায় মাদক ব্যবসায়ীরা।
পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। ১০/১৫ মিনিট ধরে গুলিবিনিময়ের এক পর্যায়ে হামলাকারীরা পিছু হটলে সেখান থেকে আব্দুর রহমানকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাত ২টা ৪০ মিনিটের দিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে একটি শ্যুটার গান, তিনটি থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলি, চারটি কার্তুজ এবং ২শ’ পিস ইয়াবা, ৫শ’ গ্রাম গাঁজাসহ ১টি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয়।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে দুই পুলিশ সদস্য।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার ভোররাতে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রামে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে যায় পুলিশ। ওই সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের উপর আক্রমণ চালায়।
পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে মাদক পাচার সিন্ডিকেট প্রধান ইব্রাহীম গুলিবিদ্ধ হয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে পাঠান। সেখানে সকাল ৯টায় তার মৃত্যু ঘটে।
ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ কবির জানান, বন্দুকযুদ্ধে এএসআই নাদের ও আইয়ুব নামে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে এবং মাদক সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা পালিয়ে গেছে।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়িতে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে শাহজাহান নামে এক মাদক ব্যবসায়ী মারা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রামদা, একটি কিরিচ, হেরোইন ও পাঁচটি গুলির খোসা উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ দাবি করেছে, শাহজাহানের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটায় ঈশ্বরগঞ্জ আঠারোবাড়ী তেলোয়ারি গন্ডিমোড়ে মাদকের ভাগাভাগি হচ্ছে – এমন খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি করলে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে শাহজাহান গুলিবিদ্ধ হয় ও অন্যরা পালিয়ে যায়।
আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বন্দুকযুদ্ধের সময় ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা বদরুল আলম খানসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।
দিনাজপুর
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে র্যাব-১৩ এর সাথে গুলি বিনিময়কালে জেলার অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী সাবদারুল (৪২) নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে র্যাব। এ ঘটনায় র্যাবের ২ সদস্য আহত হয়েছে।
জয়পুরহাট
জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার ভিমপুর এলাকায় র্যাব-৫ এর সাথে একদল মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিনিময়কালে ১ মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিহত হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব।
মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন জেলায় গত এক সপ্তাহে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অন্তত ৭১ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।