চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর দিল্লি ফিরে যাওয়া!

আমাদের দেশে মার্ক্সীয় দর্শনে উদ্বুদ্ধ নেতারা এক সময় নিয়মিত অভ্যন্তরীণ বিরোধে জড়িয়ে পড়তেন এবং সাইনবোর্ড সর্বস্ব একটি করে দল গড়ে তুলতেন। দুজন মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক কোনও বিষয়ে কখনও একমত হতে পারতেন না। বিশেষ করে মার্ক্সীয় তত্ত্বের ব্যাখ্যা ও রণনীতি নিয়ে তাদের বিরোধ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। আর তাদের বিরোধ মানেই একজন আরেকজনকে বহিষ্কার এবং একটি করে নতুন দল গড়ে তোলা। মার্ক্সীয় দর্শনে উদ্বুদ্ধ সেই সব জাঁদরেল তাত্ত্বিক নেতাদের অধিকাংশই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। যারা এখনও বেঁচে আছেন, তারা একাকী ন্যাড়া বৃক্ষের মতো বিরাজ করছেন। বর্তমান জমানায় তাদের কেউ আর পোছে না!

এ কালে মার্ক্সবাদের জায়গা দখল করেছে ধর্মবাদ। এখনকার ধর্মতাত্ত্বিকরা যে যার নিজের মতো করে ধর্মের ব্যাখ্যা দেন। তাদের মধ্যেও মতের মিল খুব কম দেখা যায়। মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকদের মতো তারাও একে অপরের চেয়ে ভালো বোঝেন এবং বেশি বোঝেন। একে অপরের তত্ত্ব ও ব্যাখ্যাকে বাতিল করতে উভয়েই সিদ্ধহস্ত। তাইতো আমাদের দেশে তথাকথিত মার্ক্সবাদী দলগুলোর মতো ধর্মবাদী দলগুলোরও অজস্র-অসংখ্য সংগঠন।

এবার বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে ভারতীয় উপমহাদেশের সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন তাবলিগ জামাতের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা গেল। তাবলিগ জামাতের একাংশের বিরোধিতার মুখে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দলভীকে শেষ পর্যন্ত ইজতেমায় অংশগ্রহণ না করেই দিল্লি ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিতে হলো!

অথচ মাওলানা সাদ কান্ধলভী গত তিন বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসছিলেন!

উল্লেখ্য, মাওলানা সাদ তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভীর (রহ.) নাতি। তিনি তাবলিগ জামায়াতের অন্যতম শীর্ষ মুরুব্বি এবং ভারতের শীর্ষ আলেম। ২০১৪ সালে নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে তার পিতা তাবলিগ জামায়াতের আমির মাওলানা জোবায়েরুল হাসান মারা যাওয়ায় পর থেকে বর্তমানে তিনি তাবলিগ জামাতের বিশ্ব মারকাজ দিল্লির নিজামুদ্দিনে মুরব্বি হিসেবে পালন করছেন। তাবলিগ জামাতের বিশ্ব মারকাজ দিল্লির নিজামুদ্দিনে প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর তিনি বয়ান পেশ করেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় তাবলীগ জামাতের মূল কেন্দ্র হচ্ছে দিল্লিতে। সেখানকার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন অনেক আগে। এখন বাংলাদেশেও সে বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে পাকিস্তান এবং মালয়েশিয়াসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোতে বিভক্তি এসেছে। ইতিমধ্যে তাবলিগ জামাতের আমিরের পদ থেকে ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ সাদকে সরিয়ে দেয়া হলে টঙ্গী থেকে বিশ্ব ইজতেমা মালয়েশিয়ায় স্থানান্তর করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া তাবলিগের শুরা কর্তৃপক্ষ।

যথারীতি মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে ‘ধর্ম অবমাননা’ ও ‘বিতর্কিত বক্তব্য’ প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে: ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম। কারো পকেটে ক্যামেরা বিশিষ্ট মোবাইল রেখে নামাজ পড়লে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না। যে উলামায়ে কেরাম ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখেন, তারা উলামায়ে ছূ। বারবার কসম করে বলেন, তারা হলেন উলামায়ে ছূ। এমন আলেমরা হলো গাধা।

কুরআন শরিফ শিখিয়ে যারা বেতন গ্রহণ করেন, তাদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ। যেই ইমাম এবং শিক্ষকরা বেতন গ্রহণ করেন, তাদের আগে বেশ্যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। মাদরাসাগুলোতে যাকাত না দেয়া হোক। মাদরাসায় যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। রাসূল (স.) এর পর কেবল তিনজনের বাই’আত পূর্ণতা পেয়েছেন, বাকি সকলের বাই’আত অপূর্ণ। তিনজন হলেন; শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহ.), মাওলানা ইলিয়াছ (রাহ.) ও মাওলানা ইউসূফ (রাহ.)।

দাওয়াতের পথ নবীর পথ, তাছাউফের পথ নবীর পথ নয়। রাসূল (সা.) দাওয়াত ইলাল্লাহ’র কারণে ইশার নামাজ দেরিতে পড়েছেন। অর্থাৎ নামাজের চেয়ে দাওয়াতের গুরুত্ব বেশি। হযরত মুসা (আ.) দাওয়াত ছেড়ে দিয়ে কিতাব আনতে চলে যাওয়ার কারণে পাঁচলক্ষ সত্তর হাজার লোক মুরতাদ হয়ে গেল। হযরত মূসা (আ.) কর্তৃক হারুন আ. কে নিজের স্থলাভিষিক্ত বানানো উচিত হয়নি। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে জিজ্ঞাস করবেন, তা’লীমে বসেছিলে কি না, গাশত করেছিলে কি না? প্রত্যেক সাহাবী অপর সাহাবীর বিরুদ্ধাচরণ করছেন।

মাওলানা সাদ আদৌ উল্লিখিত বয়ান দিয়েছেন কি না, আর যদি দিয়ে থাকেন, তাহলে এসব উচিত না অনুচিত হয়েছে, আমরা সেই বিতর্কে যাব না! যারা এসব ভালো বোঝেন, বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার তাদের হাতেই থাকা দরকার।
আমাদের একটাই প্রশ্ন, মার্ক্সবাদী-ধর্মবাদী সবাই যদি কেবল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন, প্রকৃত দর্শন বাদ দিয়ে দর্শনের ব্যাখ্যা নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হন, বিভেদের পথে হাঁটেন, তাহলে মানুষকে ঐক্যের পথে আনবে কে? আর ঐক্য ছাড়া মানুষের মুক্তিই বা আসবে কোন পথে?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)