চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মহাসড়কের ব্যবস্থাপনার দায় কি জাহাঙ্গীরনগর প্রশাসনের?

শিক্ষক হিসেবে ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা আমাদের ভালো। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বাস। মুশকিল হলো, একেবারে সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয়। সকালের মিষ্টি ঘুম ভেঙে বাসে ওঠার প্রস্তুতি। সাথে মনে করে দরকারি বই, খাতা-পত্র, অফিস রুমের কিংবা বিভিন্ন ড্রয়ারের চাবি, টাকা-পয়সা সাথে নেয়া। সময়মতো পৌঁছাতে হবেই, কারণ ওদিকে যে কষ্ট করে ক্লাসে আসা ছেলে-মেয়ের দল অপেক্ষা করে বসে আছে। মাঝে মাঝে যে নিজেদের আরামের বাস মিস হয় না, তা না। মিস হয়। যেদিন মিস হয়, সেদিন টের পাওয়া যায়, কত ধানে কত চাল।

নিজেদের বাস মনে-দেহে যে যেরকম আরামের ও নিরাপত্তার আবেশ এনে দেয়, সাধারণ পাবলিক বাস ঠিক তার উল্টো। আজ পর্যন্ত বাইরের বাসে শান্তিমত নামতে পারিনি। বাসগুলো কেমন যেন জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের এলাকায় আসলেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রায় চলন্ত অবস্থায় বাস থেকে গেইটে নামতে হয়। বাসগুলো কখনোই শান্তি ও স্বস্তিতে আমাকে নামতে দেয়নি।

কিন্তু এমন কেন হবে? গাবতলী থেকে নবীনগর রোডে বাসগুলো সবখানেই দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়। কিন্তু ক্যাম্পাসের পয়েন্টগুলোতে এত তাড়াহুড়ো কেন? একবার এক মিনিটের জন্য বাস মিস করে ফেললাম। সহকর্মীদের ফোন দিতে গিয়ে দেখি মোবাইলে ব্যালেন্স নাই। সকালের এক মিনিট অনেক সময়। এক মিনিটে গাড়ি অনেক দূরে চলে যায়। বাস মিস করে উঠলাম শুভযাত্রায়। শুভযাত্রা ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অটোমেটিক চয়েস। খুব ভালো টানে বাসগুলো।

এ বাসে সকালে উঠতে পারলে তেমন সময় নষ্ট হয় না। ক্যাম্পাসের বাসের সাথেই সাথেই প্রায় থাকা যায়। সকালের নন-এসি বাসও কখনো কখনো এসি বাস বলে মনে হয়। প্রকৃতি যদি ভেজা থাকে, তাহলে বেশ আরাম। ৫০ মিনিটে সায়েন্সল্যাব এরিয়া থেকে চলে আসলাম ক্যাম্পাসের কাছাকাছি। সিএন্ডবি এসে বাস যাত্রী নামাল, ওঠাল। সামনের ডেইরি গেইটে নিশ্চয় বাস থামবে। আমাকে আরামে নামিয়ে দেবে। কিন্তু কিসের কী? বাস মহাগতিতে চলতে চলতে ডেইরি গেইট পার হয়ে গেল। আমি একটু সামনে গিয়ে নামতে বাধ্য হলাম।

এদিনের অভিজ্ঞতায় আরেকদিন একই বাসে আগে থেকেই হেল্পারকে বলে রাখলাম। হেল্পারকে বললাম, তোমরা জাহাঙ্গীরনগর গেইটে এসে এত তাড়াহুড়ো কর কেন? আমাকে সুন্দর করে নামিয়ে দেবে। আমি বেশ নরম গলায় শুদ্ধ বাংলায় বলাতে কিশোর হেল্পার বেশ অবাক হল। কিন্তু বাস থামাল না। আমাকে আগের মতই চলন্ত বাস থেকেই নামতে হল। নামিয়ে দেবার সময়, মনে হল সে কিছু একটা বলে আমাকে নিয়ে বিদ্রুপ করল। আমি কিছু বোঝার আগেই বাস অনেক দূর চলে যাওয়ায় আর পাল্টা কিছু বলতে পারলাম না।

আমার প্রশ্ন হল, কেন এমন হবে? বাসগুলো জাবি গেইটে এসে সুন্দর করে থামার কথা। কেন আমাদেরকে বারবার দৌড়ের ওপর নামতে হয়। এর ফলে যদি কোনো দুর্ঘটনা হয়, তখন এর দায় কার? বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় গত সপ্তায় শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগরের দুজন মেধাবী ছাত্র আমাদের ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। দুটি পরিবার এর ফলে পঙ্গু হয়ে গেছে। পুরো ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এর পুরো দায় কি আমাদের জাহাঙ্গীরনগরের প্রশাসনের?

গত বছর চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং বাংলাদেশ সফরে এসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ সফর করতে গিয়েছিলেন। এক রাতের ভেতরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সবগুলো স্পিডব্রেকার উঠিয়ে দিয়েছিল। আমার ব্যক্তিগত সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসএসএফের অফিসে একটি সমন্বয় সভা হয়েছিল চীনা রাষ্ট্রপতির স্মৃতিসৌধ গমন উপলক্ষ্যে। সে সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছিল, স্পিডব্রেকারগুলো যেমন উঠাবেন, তেমনি একদিনের মধ্যে সেভাবে সবগুলো স্পিডব্রেকার আবার আগের মতো বানিয়ে দেবেন। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেভাবে কাজ করেনি। যদি কাজ করতেন তাহলে প্রান্তিকে একজন ভ্যানচালক আর সিএণ্ডবি এলাকায় আমাদের দুজন ছাত্র হয়ত এভাবে মারা যেতেন না।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের বড় বড় কর্মকর্তাদের কাছে আমার এ লেখা হয়তো পৌঁছাবে না। যদি পৌঁছায়, তাহলে আপনাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে একটু ভাববেন? আপনারা কী সুন্দর ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেউ আপনাদেরকে চেনে না, ধরেও না।

পত্রিকায় কী আপনারা এই দুর্ঘটনার খবরও পান না? যখন দেখেন, নিরীহ প্রাণ ঝড়ে যাচ্ছে রাজপথে এবং আপনাদের গাফিলতি এর অন্যতম কারণ। তখন আপনাদের মনে কী রকম অনুভূতি হয়? খুব জানতে ইচ্ছে করে। অথচ দেখেন, দুজন ছাত্র মারা গেল অল্প বয়সেই। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেল। হল খালি করা হলো। আমাদের ছেলে-মেয়েদের একটা অংশ উপাচার্যের বাড়িতে হামলা করল। অথচ আপনারা রয়ে গেলেন ধরাছোঁয়ার অনেক বাইরে।

সব চাপ কেন আমাদের নিতে হবে? মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগ কেন দায় নেবে না? মহাসড়কের ব্যবস্থাপনার দায় কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরের নয়। মহাসড়কের জন্য সুনির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় রয়েছে। বিভাগ রয়েছে। দয়া করে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। আমাদেরকে এমন মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)