এই পরীক্ষাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এই পরীক্ষা শুধু শিক্ষার্থী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে সেটাই নির্ধারণ করে দেয়না বরং ঠিক করে দেয় তাদের পেশাজীবন। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক উভয়েই মনে করেন এটা তাদের ভবিষ্যতের ওপর অনেক প্রভাব আনবে।
বৃহস্পতিবার সাউথ কোরিয়ার ৫ লাখ শিক্ষার্থী দেশটির ম্যারাথন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বসছে। চাপপূর্ণ এই পরীক্ষাটি করোনা মহামারির চলমান তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য এবছর চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি।
কলেজ স্কলাসটিক অ্যাবিলিটি টেস্ট (সিস্যাট) এর সাউথ কোরিয়ান শব্দ সুনেয়াং দীর্ঘ আট ঘণ্টাব্যাপী পরীক্ষা। সেখানে একজন শিক্ষার্থীকে ছয়টি বিভাগে (কোরিয়ান, গণিত, ইংরেজি, ইতিহাস, সামাজিক শিক্ষা এবং দ্বিতীয় বিদেশি ভাষায়) পরীক্ষা দিতে হয়।
ফলে যখনই এই পরীক্ষা শুরু হয় তখন সারাদেশ শ্বাস আটকে অপেক্ষা করে। এমনকি বিমান চালনাও বন্ধ রাখা হয় যেন পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষার্থীর মনোযোগ নষ্ট না হয়। অফিস দেরিতে শুরু হয় যেন অভিভাবকরা সময়মতো তাদের সন্তানকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে পারেন। বন্ধ রাখা হয় সামরিক প্রশিক্ষণ এবং শেয়ার বাজারও দেরিতে খোলা হয়।
চারবছর বয়স থেকে সন্তানদের এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা শুরু করে বাবা-মায়েরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের শিক্ষা শুরু হয় ২ বছর বয়স থেকেই। শুধু সেসবই নয়। এসব চাপের সঙ্গে এবছর যুক্ত হয়েছে আরেকটি চাপ। সেটি হলো করোনাভাইরাস মহামারি।
সাউথ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছেন ৫০০ জনের বেশি। তবে সম্প্রতি সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই ভীত। প্রতিদিন দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে ৫০০ জন করে। সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন নতুন বিধিনিষেধ নিয়ে আসছে দেশটি।
পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপগুলো হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরতে হবে এবং প্লাস্টিক বিভাজন দিয়ে আলাদা করা সিটে বসতে হবে। পরীক্ষার কেন্দ্রে কোনো পানি পরিশোধক থাকবে না। শিক্ষার্থীদের নিজেদের জন্য পানি ও প্যাকেট করা খাবার বয়ে আনতে হবে। ব্রেকের সময়ে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হতে এবং কথাও বলতে পারবে না। পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রাও পরিমাপ করা হবে। যদি তাপমাত্রা বেশি থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের আলাদা কক্ষে পরীক্ষা নেয়া হবে।
তবে এত সব নিষেধাজ্ঞায় শিক্ষার্থীদের ভালো করার যোগ্যতার উপরে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছে অনেক শিক্ষার্থী। কেউ কেউ ভাবছেন তাতে স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব পড়বে। কারো কারো মতে মাস্ক মনোযোগ নষ্ট করবে, কারো কারো ধারণা তারা মাস্ক পরে দমবন্ধ অনুভব করবে।
ডেস্ক বিভাজনে বসে পরীক্ষা দেওয়া কঠিন হবে বলেও মনে করছে কেউ কেউ। আবার অনেকেই তাদের ঝুঁকিতে ফেলায় রাগান্বিতও। তবে কেউ কেউ একটু রাগান্বিত হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই চায়, দ্রুত পরীক্ষাটা শেষ হোক।
এই পরীক্ষাটা জীবনের উপর এতই প্রভাব যে সেটা আর পেছাতে চাননি কর্তৃপক্ষ। এই মহামারির সময়েই পরীক্ষা নেওয়ায় তাই ক্ষমাও চেয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন।