আমেরিকান রাজনীতি ও নির্বাচন ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা মানটি এ যাবত কালের সর্বনিম্নে, রুচিহীন, আক্রমণাত্মক, বর্ণবাদী, কী নয়? এর সর্বশেষ সংযোজন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজের স্ত্রী হেইডিকে আক্রমণ।
এই পর্বের শুরুটা গত ২২ মার্চের মনোনয়ন থেকে যখন রিপাবলিকান অর্থ-প্রদায়কদের (সুপার-প্যাক) পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় ইউটাহ স্ট্যাটে, সেখানকার মরম্যান খৃষ্টান রক্ষণশীল ভোটারদেরকে উদ্দেশ্য করে। সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রমনির রাজ্য, তিনি এর আগে গত মাসে দলের হয়ে ডোনাল্ডকে ভোট না দেয়ার জন্য আহবান করেছেন। বলেছেন, ডোনাল্ড একজন ভুয়া এবং প্রতারক, ইত্যাদি।
মিট রমনি নিজেও একজন মরম্যান। দলের পক্ষ থেকে অর্থাৎ অর্থ-প্রদায়কদের খরচে বানানো ওই বিজ্ঞাপনে দেখা যায় ডোনাল্ডের স্ত্রী মিলানিয়াকে বস্ত্রহীন-উলঙ্গ পোজে। সেই ছবিতে মিলানিয়ার নারী অঙ্গসমূহ ধুসর করে দিয়ে বিজ্ঞাপনে বলা হয়- এই হচ্ছে তোমার ভবিষ্যৎ ‘ফার্স্ট লেডি’যদি তুমি ডোনাল্ডকে ভোট দাও। ওই ছবি প্রকাশ করেছিল বহু বছর আগে জিকিউ ম্যাগাজিন। তখন ডোনাল্ডের সঙ্গে মিলানিয়ার বিয়ে হয়নি। ওই বিজ্ঞাপনে পরোক্ষ সমর্থন দেয়া হয়েছিল টেড ক্রুজকে। টেড ক্রুজ সেখানে জয়ীও হয়েছিল।
এর পরই ডোনাল্ড মিলানিয়া এবং হেইডির ছবি দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি হেইডির গোপন ফাঁস করে দেবে এবং রুচিহীন ভঙ্গীতে ছিল তার ওই টুইট। তার উত্তরে টেড ক্রুজ প্রথমে তার স্বভাব অনুযায়ী সঠিক মেজাজের উত্তর করেছেন এই বলে যে, ডোনাল্ড প্রকৃত পুরুষরা নারীকে আক্রমণ করে না। তোমার স্ত্রী মিলানিয়া লাভলি এবং আমার স্ত্রী হেইডি আমার জীবনের ভালোবাসা।
টেড’এর এই প্রতিক্রিয়া ডোনাল্ডকে যৌক্তিক করা যায়নি। তিনি এর পর তার স্ত্রী মিলানিয়া’র একটি সুন্দর ছবি এবং হেইডির একটি তেমন সুন্দর নয় ছবি দিয়ে বলেছেন- একটি ছবিই হাজার কথার চাইতে মূল্যবান! এমনিতেও মিলানিয়া সুন্দরী, তিনি সুপার মডেল ছিলেন।
এর পর টেড রেগেছেন, টিভি ক্যামেরার দিকে আঙ্গুল তুলে ডোনাল্ডকে শাসিয়েছেন এই বলে- আমাকে রাগানো অত সহজ নয়, সহসা আমি রাগি না। কিন্তু ডোনাল্ড তুমি আমার বাচ্চা এবং বউয়ের বিষয়ে ঝামেলা করছ, তুমি একটা নাক শিটকানো ভীরু, হেইডিকে একা থাকতে দাও।
টেডের পক্ষ থেকে যুক্তি হচ্ছে ইউটাহতে ওই বিজ্ঞাপনের সঙ্গে তার ক্যাম্পেইনের (প্রচারণার) কোন সম্পর্ক নেই। ওটা রিপাবলিকান দাতাদের পক্ষ দেয়া, আমাদের ক্যাম্পেইনের তার উপর কোন হাত নেই। ডোনাল্ড তা জানত না তা নয়। কিন্তু কোন না কোন ভাবে তিনি টেডকে আক্রমণই করতে চেয়েছেন যেহেতু প্রায় গোটা রিপাবলিকান দলের নেতৃবৃন্দ টেডের পেছনে দাঁড়াচ্ছেন ডোনাল্ডের বিরুদ্ধে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অগণিত এমন রুচিহীনতার উদাহরণ আছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রমনি তাকে ভুয়া ও প্রতারক বলেছেন সত্য, ধমক দেননি। কিন্তু টেড রীতিমত ধমক দিয়েছেন।
যদিও এখনো পর্যন্ত দলীয় মনোনয়নের প্রাইমারি/প্রাথমিক বা ককাসের ভোট এখনো ডোনাল্ডের দিকেই বেশী। ডোনাল্ডের ডেলিগেট সংখ্যা বর্তমানে ৭৩৯, টেডের ৪৬৫ এবং কেইসিকের ১৪৩। রিপাবলিকান মনোনয়ন নিশ্চিত করবার জন্য দরকার ১২৩৭ ডেলিগেট (প্রতিনিধি), মোট ২৪৭২ প্রতিনিধি থেকে।
রিপাবলিকান দল মনে করে ডোনাল্ড ট্রাম্প দলকে ডাকাতি করে নিয়েছে এবং প্রায় রিপাবলিকান মনোনয়ন পেতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে দল এখন চাচ্ছে মনোনয়ন সম্মেলন যাতে ভাঙ্গা (ব্রোকেন কনভেনশন) হয়। অর্থাৎ কেউই যাতে ১২৩৭ ভোট সংরক্ষণ করতে না পারে। তাহলে ডেলিগেটরা নতুন করে আরো দুইবার ভোট দিতে পারবেন যে কাউকে প্রার্থী হিসাবে। সে ক্ষেত্রে দল তখন প্রতিনিধিদের পরামর্শ দেবে কাকে ভোট দেয়া উচিত। প্রতিনিধিরা সবাই দলের অনুসারী। কিন্তু বর্তমানে তারা যে কারো পক্ষে পরে যাচ্ছে সেটা তাদের নিজস্ব ইচ্ছায় নয়। জনসাধারণের প্রার্থীকে ভোটের ফলাফল তাদের একজন প্রার্থীর হয়ে যান।
অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট মনোনয়ন লড়াইয়ে গতকালের তিনটি ককাসে হিলারি ক্লিনটনের বিপরীতে বার্নি স্যান্ডার্স জিতলেও তিনি সংখ্যায় এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। সুপার ডেলিগেটসহ হিলারির সংখ্যা ১৭১২ এবং বার্নি স্যান্ডার্সের ১০০৪। ডেমোক্রেটিক সর্বমোট প্রতিনিধি সংখ্যা ৪৭৬৫।
গাণিতিক ভাবে এখন হিলারির মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। যদিও বার্নি স্যান্ডার্স চাচ্ছেন মনোনয়ন নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত যেতে যদি প্রতিনিধি সংখ্যা তার দিকে আনতে পারেন।
প্রতি রোববার থাকে প্রার্থীদের সঙ্গে প্রধান গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকার। ইস্টার সান-ডেতে তা একটু ভিন্ন ছিলো, তৎপরতাটা কম। ডোনাল্ডকে মনে হলও কিছুটা শান্ত, কম আক্রমণাত্মক, যা একেবারে তার স্বভাব বিরোধী। তার অর্থ এমনও হতে পারে যে তিনি কিছুটা ঘাবড়ে গেছেন তার নিজস্ব স্টাইল সম্পর্কে।
কেনোনা এর মধ্যে রেজিস্টার্ড রিপাবলিকানদের মহিলাদের মধ্যে ৭৩ ভাগ নারী ভোটাররা তার বিরুদ্ধে মতামত দিচ্ছেন, টেড ক্রুজের স্ত্রীকে আক্রমণ করবার পর। ফলে আজকে যখন তাকে এই নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলও, তার উত্তরে প্রায় অসংলগ্ন; তার স্টাইলের বাইরে গিয়ে বললও- আমি এ ব্যাপারে কিছু বলব না, কারণ আমি বললেই গণমাধ্যম আমার বিরুদ্ধে যায়।
গত সপ্তাহে রোলিং স্টোন ফ্রি শো করেছে হাভানাতে। এর চেয়ে বড় বিপ্লব? ক্যাস্ট্রো’র বিপ্লবী সরকার কিউবার ক্ষমতায় এসে রোলিং স্টোন, বিটলসদের মত গানের গ্রুপগুলোকে বলে দিল এইগুলো সাবভার্সিভ! বিপ্লব-বিরোধী। রোলিং-স্টোনের ওই শো’তে সুপার মডেল ন্যাওমী ক্যাম্পবেল এবং অভিনেতা রিচার্ড গিয়েরও ছিলেন! ফলে যে দলের রেকর্ড পর্যন্ত কোন কিউবার নাগরিকের কাছে পেলে বিচারের মুখোমুখি হতে হতো, সেই দল সাক্ষাত শো’ করলো হাভানাতে। আর এই সাম্প্রতিক সঙ্গীত সংক্রান্ত বিপ্লবের জন্য কৃতিত্বের অধিকারী হলেন ক্যাস্ট্রো পুত্র আলেহান্দ্রো!