চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মইনুল তুমি কার?

তারেক জিয়া ইস্যুতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সেখানে তারেক রহমানের নেতৃত্ব ধ্বংস করার জন্যই ড. কামালকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ইতিমধ্যে এই ফোনালাপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফাঁস হওয়া ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের সেই ফোনালাপটির কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:

মজুমদার: আরেকটা নিউজ স্যার, এটা একটা রিউমার উঠেছে যে, আপনি আর ড. কামাল হোসেন লন্ডনে যাচ্ছেন তারেক রহমানের সঙ্গে মিটিং করার জন্য?

মইনুল হোসেন: বাদ দেন। আমাদের মিটিং তারেকের সঙ্গে, আমরা মিটিংয়ে যাবো? এরা কোথাকার ছাগল? আমরা তারেকের নেতৃত্ব ধ্বংস করার জন্যইতো ড. কামালকে এনেছি।


কয়েকদিন আগে একটা টিভি টকশোতে একজন নারী সাংবাদিককে চরিত্রহীন বলে দেশজুড়ে সমালোচিত হন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। সেখানে আলোচনার এক ফাঁকে মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন ছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন কিনা?

জবাবে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।’

একজন আইনজীবী, একটি পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি টিভি টকশোতে এমন হাস্যকর ও অবান্তর ক্ষোভ ঝাড়বেন বিষয়টা খুবই লজ্জাজনক নয় কি? জামায়াত সম্পৃক্ততার কথা শুনে তিনি কেন এমন ক্ষেপে গেলেন ছেলে মানুষের মত? তিনিতো জামায়াত শিবিরের সম্মেলনে যোগ দিয়ে শিবিরের মহিমা কীর্তনও করেছেন৷ শিবিরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তারা রাজনীতির গুণগত মান উন্নয়নে চেষ্টা করছেন বলে। তবে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে এসেছেন কার প্রতিনিধিত্ব করতে? মানহানির মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন গ্রেপ্তার হলেন। তার সুহৃদরা বলছেন সরকারের রোষানলে এই গ্রেপ্তার। তিনি সরকারের লোকও নন জামাতের লোকও নন৷ এখন দেখছি বিএনপিরও নন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে কোন কুটিল খেলা খেলছেন তিনি? তবে কি আবারও সেই মাইনাস টু? একজনের সাথে মিত্রের বেশে আরেকজনের সাথে শত্রুর? জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। ছোট-বড় যে কোন রাজনৈতিক দল মিলে জোট গঠন করতে পারে। এ জোট হতে পারে আন্দোলন কেন্দ্রিক, হতে পারে নির্বাচন কেন্দ্রিক। বিগত দিনে ৮ দলীয় জোট দেখেছি,৭ দলীয় জোট দেখেছি, ৫ দলীয় জোট দেখেছি। আবার জোটের সাথে জোট মিলেও জোট হতে দেখেছি। যেমন ৮ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোট মিলে গঠিত হয়েছে ১৫ দলীয় জোট। ৫ দলকে দেখেছি ২২ দলীয় জোটে মিশে যেতে। এসব জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিভিন্ন দলের নেতারা।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আসম আব্দুর রব গেলেন জাসদ নেতা হিসেবে, মাহমুদুর রহমান মান্না নাগরিক ঐক্য ও মির্জা ফখরুল বিএনপি নেতা হিসাবে। ব্যারিস্টার মইনুল কি হিসাবে গেলেন? বিএনপির বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান।

বিএনপির সাথে জোট করে এক মঞ্চে উঠে আবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনকেই ধ্বংসের চিন্তা! এ চিন্তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন, বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল, মওদুদ ও গয়েশ্বরগং।

‘বেসরকারি টেলিভিশনের লাইভ টক শোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলে অপবাদ দেয়ার কারণেই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ঐক্য ফ্রন্টের নব্য নেতা সেই বিবেচনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে কোনো জোটের বিষয় নয়, ব্যক্তির অপরাধের বিষয়। এটি একটি অপরাধ, মইনুল হোসেন একজন নারী সাংবাদিককে যেভাবে অ্যাবিউজ করেছেন, কোনো মার্জিত সুশীল ব্যক্তির পক্ষে কি সম্ভব এ ধরনের আচরণ করা?

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন কারাগারে এ ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কি বক্তব্য? আর কে এই রব মজুমদার যার সাথে ফোনালাপ হলো? বিএনপিকে নিয়ে জোট করবেন আবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মাইনাস করতে চাইবেন; এটা কেমন ধারার কথা হল? ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বঙ্গবন্ধুর আমলে আওয়ামী লীগ করতেন।

১৯৭৪ সালে জাল পরিহিত যে বাসন্তীর ছবি বিশ্বময় তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল তাও ছাপা হয়েছিল তার ইত্তেফাক পত্রিকায়। এই ছবির পরিকল্পনাও নাকি তারই ছিল। মঈনুল তখন আওয়ামী লীগে থেকেই আওয়ামী লীগের ধ্বংসের রাস্তা তৈরি করেছিল।

একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে মন্তব্য করে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমাদের এই ঐক্যের সাথে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। এটা আগেও পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, এখনও বলছি স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তির সাথে আমাদের ঐক্য নয়।

তিনি বলেন, আরও একটি বিষয় পরিস্কার করে বলতে চাই। আমরা ঐক্য করেছি কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বিশেষের সাথে আমাদের ঐক্যের কোনো সম্পর্ক নাই। বিশেষ করে তারেক রহমানের সাথে।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, যারা ক্রমাগতভাবে আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ ভিত্তিহীন ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন তাদেরকে আমি এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা কোন রাষ্ট্রীয় পদ পাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমি কাজ করে যাব।

ড. কামাল বলেন, আমরা দল হিসেবে বিএনপির সাথে ঐক্য করেছি। কিন্তু ব্যক্তি তারেক রহমানের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কয়েকটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ঐক্য করেছি। আর সেজন্য জনমত গঠনে কাজ করছি।

বিএনপির সাথে ঐক্য করেছেন আবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের সাথে নেই এ কথার যুক্তি কি? এ ব্যাপারে বিএনপির কি বক্তব্য? তারেক রহমানকে ধ্বংস করার জন্য যে ঐক্য সে ঐক্যে বিএনপি নেতারা থাকে কি করে? ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ফোনালাপে এই প্রশ্নটা কি জোরালো হয়ে জাগছেনা? এই প্রশ্নের মাঝেও বিএনপি নেতারা সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সভায় গেল কী করে?

ড. কামাল হোসেন যে বললেন, তিনি কোন ব্যক্তি বিশেষের সাথে ঐক্য করেননি। ঐক্য করেছেন দলের সাথে। তাহলে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সাথে কিসের ভিত্তিতে ঐক্য হলো? সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠের জনসভার মঞ্চে টানানো ব্যানারে আবার লেখা হয়েছে ‘অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি ৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এর উদ্যোগে জনসভা।’

আবার এই ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তার কোন দল নেই তবু তিনি বলেন, মঈনুলকে ছাড়া কিসের ঐক্যফ্রন্ট?ফাঁস হওয়া দ্বিতীয় অডিও ক্লিপে ব্যারিস্টার মইনুলের সঙ্গে ড. জাফরুল্লাহর কথোপকথনে শোনা যায়, ব্যারিস্টার মইনুল বলছেন, ‘আমি তাকে (ড. কামাল) বললাম, ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটা দু’লাইনের স্টেটমেন্ট দেওয়ার জন্য যে, এভাবে আমাদের ঐক্যের মধ্যে একটা গণ্ডগোল সৃষ্টি করা হচ্ছে। সে বলে কি জানো? আমি এই বিষয়টাকে ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে চাই না। বলো তো।’

এসময় ড. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তাহলে তো মুশকিল। ওরা তো এটাই চাচ্ছে যে ঐক্য না থাকুক।’ ব্যারিস্টার মঈনুল বলেন, ‘আমি তো বলে দিয়েছি আমি আর আপনার ঐক্যফ্রন্টে নাই।’ ড. জাফরুল্লাহ: চুপ করে থাকেন।

মইনুল: না চুপ করে না। আমাকে কালকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাবে আর তুমি একটা স্টেটমেন্ট দিতে পারবা না, তাহলে আমি কোন ঐক্যফ্রন্ট? আমি আমার নিজের ঐক্যফ্রন্টে থাকব।  তার ঐক্যফ্রন্টে থাকব না। দেখি তার ঐক্যফ্রন্টে কয়টা থাকে। কি আশ্চর্য আমার উপর চরম বিপদ।

ড. জাফরুল্লাহ : এসময় আমরা যদি একে অপরের পাশে না দাঁড়াই…
ব্যারিস্টার মইনুল: আমি শুধু বললাম দুই লাইনের একটা স্টেটমেন্ট দেন যে মইনুল হোসেনকে এভাবে… আমরা এতে খুব উদ্বিগ্ন। কিন্তু সে বলে আমি এটা ঐক্যফ্রন্টে আনতে চাচ্ছি না।’

এসময় অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে উচ্চস্বরে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘তার কিসের ঐকফ্রন্ট? উইদাউট মঈনুল হোসেন তার কিসের ঐক্যফ্রন্ট?

ড. জাফরুল্লাহ: খুবই খারাপ কাজ আর কি…
ব্যারিস্টার মইনুল: এটা (ড. কামাল) তো একটা কাওয়ার্ড। এটা কোন কাজের না। এর সাথে থেকে কোন লাভ হবে না আমাদের।

ড. জাফরুল্লাহ: কাওয়ার্ড। কাওয়ার্ড। উইদাউট মইনুল হোসেন কিসের ঐক্যফ্রন্ট ও ড.কামালকে কাওয়ার্ড বলে জেলে চলে গেলেন ব্যারিস্টার মইনুল।

মইনুল ঐক্যফ্রন্টেরও নয়। জামায়াতেরও নয়, বিএনপির ও নয়। আওয়ামী লীগেরও নয়। তবে মইনুল কার? কামাল-ফখরুল-রব-মান্না কিসের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নিলো তাকে? এমন ক্ষুব্ধ, অযৌক্তিক ও অশালীন বাক্যব্যবহারকারীর পরিচয় কি?

তিনি কি জেল থেকে ছাড়া পেলে আওয়ামী লীগ (মিজান), বিএনপি (ওবায়েদ) জাসদ (রব), জাসদ (মহিউদ্দীন) প্রভৃতির মত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট (মইনুল) গঠন করবেন?

এমন অশালীন শব্দ চয়নকারী যে জাতির সুশীল হয় সে জাতির পরিণতি কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আজ ১৬ কোটি মানুষ মইনুলের পরিচয় জানতে চায়। বর্ণচোরা দিয়ে আর যা-ই হোক ভাল কিছু হয় না।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)