ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন হয়রানি থেকে রেহাই দিলে রাজস্ব আয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্সের (পিডব্লিউসি) ভারতীয় বিভাগের প্রতিনিধিরা।
বুধবার রাজধানীর গুলশানের লায়লা টাওয়ারে পিডব্লিউসির কার্যালয়ে আসন্ন বাজেটে ট্যাক্স ও প্রত্যাশা নিয়ে মিডিয়া ওয়ার্কশপে তারা এমন মন্তব্য করেন।
পিডব্লিউসির বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা পার্টনার মামুন রশীদ বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। আইনি জটিলতা, দূর্বল ব্যবস্থাপনা নীতি ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ভ্যাট প্রদানে বিভিন্ন বাধা রয়ে গেছে। এসব সমাধান করা গেলে ব্যবসায়ীরা হয়রানি হবে না। পাশাপাশি রাজস্ব বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।
একই সঙ্গে ট্যাক্স অব্যাহতির খাত বাড়ানো ও ভ্যাট আইনে সংস্কার আনা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে কার্যরত প্রতিষ্ঠানটির ভারতীয় পার্টনার (ট্যাক্স অ্যান্ড রেগুলেটোরি সার্ভিস) সুস্মিতা বসু বলেন, বহু-স্তর ট্যাক্স প্রত্যাহার করা দরকার। কারন একই প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে। কিন্তু দেখা যায়, যখন কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লভাংশ ঘোষণা করে তখন লভ্যংশ ঘোষণাকারী ও লভ্যাংশ ভোগী উভয় প্রতিষ্ঠানকেই ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। যা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা প্রসার ও বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে সাময়িক বেশি ট্যাক্স পেলেও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ থেকে সরে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
তাই ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে এই কঠিন নিয়ম সংশোধন করা গেলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
সুস্মিতা বসু বলেন, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিন) বাড়ানোর মানে হচ্ছে জনগণ ট্যাক্সের অধীনে আসছে। অতএব টিন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরো নজর দেয়া দরকার। কারণ টিনধারী ট্যাক্স না দিলে তাকে আইনের আওতায় আনা যাবে।
বাংলাদেশে কার্যরত পিডব্লিউসির ভারতীয় ব্যবস্থাপক (ট্যাক্স অ্যান্ড রেগুলেটোরি সার্ভিস) প্রবীর মিত্র বলেন, ১৯৯১ সালের বর্তমান ভ্যাট আইনটিতে অনেক জটিলতা রয়েছে। আর আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া ২০১২ সালের ভ্যাট আইনটি প্রায় পুরাতন আইনের কিছু সংশোধন কপি। তবে পুরোনো আইনের সেই জটিলতাগুলো এখনও রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, দিন দিন ব্যবসার ধরণ পাল্টেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী ভ্যাট আইনে যুগোপযোগী পরিবর্তন আসেনি। এই আইনটি আরো সহজ করে ভ্যাট-ট্যাক্স দাতাদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হলে ব্যবসা দ্রুত প্রসার লাভ করবে।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির এসব প্রতিনিধিরা কর্পোরেট ট্যাক্স ও ব্যাক্তি খাতে আয়কর কমানোর পরামর্শ দেন।
কর্মশালায় অনলাইনে কর ও মূসক আদায়ের ব্যবস্থা করা হলে তা সরকারের যথাযথ রাজস্ব প্রাপ্তি বৃদ্ধি করবে ও রাজস্ব আদায়ের খরচ কমিয়ে আনবে। একই সঙ্গে করদাতাদের ভোগান্তিও অনেকটাই কমবে বলে জানায় পিডব্লিউসি। একই সঙ্গে বহুজাতিক বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘ট্রান্সফার প্রাইসিং’ প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর জোর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কর, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ সব ধরনের আর্থিক পরামর্শ সেবা দিতে পিডব্লিউসি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালের এপ্রিলে। বিশ্বের ১৫৭ দেশে শাখা রয়েছে পিডব্লিউসির, যেখানে কর্মরত রয়েছেন দুই লাখের বেশি দক্ষকর্মী।
কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন, পিডব্লিউসির ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের পরিচালক প্রসুন কে মাইতি, ট্যাক্স অ্যান্ড রেগুলেটোরি সার্ভিসের সহযোগী পরিচালক কপিল বসু, সহযোগী ব্যবস্থাপক এস কে আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইয়াকুব, শাহাদাত হোসাইন ও বিশ্লেষক সানজিদা মিথিলা প্রমুখ।