চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভ্যাট অর্থনীতিতে কী অবদান রাখছে?

দিন দিন বড় হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ফলে বাড়ছে বাজেটের আকার। আর বর্ধিত বাজেট বাস্তবায়নের দরকার হচ্ছে অধিক অর্থের। কিন্তু বিদেশি অর্থের উৎস তুলনামূলক অনেক ছোট হয়ে আসায় এখন বাজেট বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখছে অভ্যন্তরীন উৎসগুলো। যার মধ্যে ভ্যাট অন্যতম।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঘুষ প্রবণতা বন্ধ ও আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করা গেলে এর পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ভ্যাট আরোপ করলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। ফলে অতিরিক্ত দাম দিয়েই পণ্য কিনতে হয় ভোক্তাদের। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, রাজস্ব আহরণের বড় উৎস হচ্ছে এই ভ্যাট। যা রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করে। একই সাথে অর্থনীতিতে রাখে বড় ভূমিকা।

তিনি বলেন, প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট আদায়ের জন্য ক্যাশ মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দিতে পারবে না। রাজস্বও আদায়ও বেড়ে যাবে বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

বর্তমানে জিডিপিতে প্রায় ৪ শতাংশ অবদান রাখেছে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট)। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা হচ্ছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে  ভ্যাট থেকেই আদায়ের কথা আছে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আদায় পরিকল্পনার মধ্যে ভ্যাটের অংশই সবচেয়ে বেশি, ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিআইডিএসের সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ
বিআইডিএসের সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ

ভ্যাটকে অভ্যন্তরীণ সম্পদের বড় উৎস আখ্যায়িত করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। বাজেটও বড় হচ্ছে। এই বাজেট বাস্তবায়নের আরো বেশি অর্থের দরকার হচ্ছে। কিন্তু বিদেশি অর্থের উৎস তুলনামূলক অনেক ছোট হয়ে আসছে। ফলে অর্থের অভ্যন্তরীন উৎস বাজেট বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের জিডিপিতে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয় তা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সামাজিক সব খাতে উন্নয়ন ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার হয়। আর সেটা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই মেটানো হয়। অতএব রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

“তবে মনে রাখতে হবে ভ্যাট হার বাড়ালে সেটা ভোক্তার উপর প্রভাব পড়বে। ভোক্তা ও উদ্যোক্তা স্বার্থ মাথায় রেখে ভ্যাট হার বড় অংকে নির্ধারণ না করে সহনীয় পর্যায়ে রাখা দরকার। পরে ধীরে ধীরে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় নেয়া যেতে পারে। প্রতিবেশি দেশ ভারতেও এভাবে ভ্যাট আদায় হচ্ছে।”

সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসে ভ্যাট থেকে। অতএব রাজস্ব আয়ে ভ্যাটের ভূমিকা অপরিসীম।

তবে ভ্যাটে বিপুল আয়ের সম্ভাবনা থাকলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে তা সম্ভব হয় না বলে মনে করেন অর্থনীবিদরা।

সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এনবিআর কর্মকর্তারা ঘুষ নেয় এমন মন্তব্য করে ড. নাজনীন বলেন, ব্যবসায়ী আর এনবিআর ভাই ভাই। কারণ এনবিআরে কিছু কর্মকর্তা আছে যারা ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশে ঘুষ খেয়ে ভ্যাট আদায় নমনীয়তা দেখায়। এতে ব্যবসায়ীরা কম ভ্যাট দিয়েও পার পেয়ে যায়। এ বিষয়ে এনবিআরকে আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

বিআইডিএসের এই সিনিয়র গবেষক বলেন, ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের সমস্যা দেখাবে। এটাই স্বাভাবিক। সেটা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব এনবিআরের। কিন্তু তারাই ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্য গড়ে ঘুষ খেয়ে ভ্যাট আদায়ে নমনীয়তা দেখায়। এতে অনেক ব্যবসায়ী নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে নামমাত্র ভ্যাট দিয়েই পার পেয়ে যায়। আর তাতে বড় অংকের রাজস্ব হারাতে হয় সরকারকে।

“আমরা রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ তথা অবকাঠামেোর উন্নয়ন চাইবো কিন্তু ভ্যাট দিবো না, এটা তো হতে পারে না। কারণ সরকার রাষ্ট্রের এ ধরনের আয় দিয়ে অবকাঠামোর উন্নয়ন করে।”