খাদ্যপণ্যে ভেজালের বিষয়টি যে মহামারি আকারে বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে, তা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ানোর পর নতুন করে বুঝা গেছে। এমনকি ভেজালের তালিকায় অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত কোম্পানীর পাশাপাশি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে।
আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এসব খাদ্যপণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নিতে হাইকোর্ট নির্দেশনার পরও অনেকগুলো বাজারে রয়েই গেছে।
চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদনে জানা যায়: ‘‘ভেজাল ও নিম্নমানের কারণে ৫২টি প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যকে বাজার থেকে তুলে নেয়ার নিদের্শনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ কাজে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে হাইকোর্টের নির্দেশনার বাস্তবায়ন পাওয়া যায়নি। প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ বেশ কিছু পণ্য।
খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, ক্রেতারা নিতে আপত্তি জানালেও উৎপাদনকারি কোম্পানীর প্রতিনিধিরা এসব পণ্য বিক্রিতে উৎসাহ দিচ্ছেন। তবে কোনো কোনো দোকান থেকে পণ্য তুলে নেয়ার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।’’
আমরা মনে করি, ভেজাল এসব পণ্য বাজার থেকে তুলে দিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো কোনো খাদ্যপণ্য তুলে নিলেও অন্যরা কেন এখনও ভেজাল পণ্য তুলে নেয়নি তা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। কারণ, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার পাশাপাশি তারা হাইকোর্টের নির্দেশনাও অমান্য করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। এজন্য তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
যে ৫২টি খাদ্যপণ্যের বিষয় হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে রমজানকে সামনে রেখে বিএসটিআই সেই পণ্যগুলো পরীক্ষা করেছিল। আমরা মনে করি, শুধু রমজানকে সামনে রেখে না, বছরের ৩৬৫ দিনই ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
হাইকোর্ট অবশ্য ভেজাল খাদ্যপণ্যের ভয়ঙ্কর প্রভাব উপলব্ধি করে মাদকবিরোধী অভিযানের উদাহরণ টেনে ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। আমরা হাইকোর্টের এ আহ্বানের সাথে একমত পোষণ করছি।
আদালতের বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে আমরাও বলতে চাই, খাদ্যে ভেজালের বিষয়টিকে এক নম্বর অগ্রাধিকার দিয়েই কাজে নামা উচিত। এক্ষত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা শুধুমাত্র একজন কর্মকর্তা হিসেবে নন, একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি।
তাই শুধু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সারা নয়, বরং এই ৫২টিসহ সব ধরনের ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।