মহামারি করোনার এই দুঃসময়ে সোশাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাবিলা নূর। তার বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ, ভিনদেশি একজন অভিনেতার কাছে নিজের দেশকে ছোট করেছেন।
সাবিলার কী কথা হয়েছিলো ভিনদেশি অভিনেতার সঙ্গে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে সম্প্রতি অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা, গায়ক, গীতিকার ও পরিচালক জ্যারেড লেটোর সঙ্গে একজন ভক্ত হিসেবে লাইভে যোগ দিয়েছিলেন সাবিলা নূর। শুরুতেই লেটোর ভক্ত হিসেবেই সাবিলা নিজের পরিচয় দেন।
জ্যারেড লেটো ইনস্টাগ্রামের ওই লাইভটিতে সাবিলার কাছে জানতে চান তার দেশ কোথায়। জবাবে সাবিলা বলেন, বাংলাদেশ। তারপর প্রশ্ন ছুঁড়ে এ অভিনেত্রী বলেন, লেটো বাংলাদেশের নাম এর আগে শুনেছেন কি না?
সাবিলার এমন প্রশ্নের জবাবে জ্যারেড লেটো জানান, হাউ স্টুপিড ডু ইউ থিংক আই এম? (তুমি আমাকে কতটা বোকা ভেবেছো যে আমি বাংলাদেশকে চিনবো না?) আমি অবশ্যই বাংলাদেশ চিনি। ভাঙা বাংলায় একটি সংলাপ বলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি জায়ান্ট দেশ। এমন উত্তরে সাবিলা খুশি না হয়ে বরং হলিউডের এই অভিনেতাকে বোঝাতে শুরু করেন, বাংলাদেশ জায়ান্ট দেশ নয়।
লেটোর সঙ্গে সাবিলার এ আলাপের পর থেকেই সোশাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি চলতে থাকে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সাবিলাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। কেউ বলছেন, সাবিলা ভিনদেশি তারকার কাছে নিজের দেশকে ছোট করেছেন! কেউ আবার সাবিলার মধ্যে দেশপ্রেম নেই বলেছেন! আবার কেউ বিশ্রি ভাষায় গালমন্দ করছেন।
দিনভর নেতিবাচক মন্তব্যের পর সাবিলা নূর বিষয়টি নিয়ে তার ফ্যান পেজে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে লেটোর একজন ভক্ত হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরেন সাবিলা। তার স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ করছি, স্যোসাল মিডিয়ায় আমাদের আচরণগুলো কতটা ভয়ংকর আক্রমনাত্মক হয়ে যাচ্ছে। কারো পান থেকে চুন খসে পড়লে এতই অসহনশীল হয়ে যাচ্ছি যে, তাকে ভয়ংকর অপরাধীর তকমা দিয়ে দিচ্ছি, মনে হয় আমরা সবাই রোবটের মত নির্ভুল জীবনযাপন করি?
সবাই এতই পারফেক্ট যে, কোন মানবিক উচ্ছ্বাস প্রকাশেও আমরা দাঁড়ি কমা সেমিকোলন মেপে কথা বলি, আমাদের আবেগ থাকতে নেই, আনন্দ প্রকাশের সহজ স্বাভাবিক অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ নেই। আমার জীবনকে আমি কখনোই এতটা রোবটিক চাই নি। একটি মানবিক জীবনই আমার ভালো লাগে যেখানে আমি প্রিয় কোন কিছুর সামনে আবেগের প্রকাশে জটিলতা চাই না, আনন্দ প্রকাশে কৃপণতা করতে চাই না, উচ্ছ্বাস আসলে শত সহস্র হিসেব করে প্রকাশ করতে চাই না, সহজ স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে চাই প্রিয় মানুষের সাথে।
তবে প্রফেশনাল, অফিশিয়াল কোন ক্ষেত্রে আমি সবচেয়ে সঠিক হিসেব করে কাজ করি এবং কথা বলি প্রতিটি অক্ষর মেপে আমার শিক্ষা, জ্ঞান দিয়ে চিন্তা করে। আমার কাজ দেখে অনেক ফ্যান যখন আমাদের সাথে কথা বলতে আসেন, তখন অনেক অদ্ভুত আচরণ করেন, অনেক সময় অনেকটা বেশিই করে ফেলেন ছবি তুলতে যেয়ে কিন্তু তাদেরকে আমি কখনোই স্যোসাল মিডিয়ায় হ্যারাসমেন্ট করি না। কারণ আমরা বোঝার চেষ্টা করি এটা আবেগ থেকে সে করে ফেলেছে, কোন অপরাধ করার প্রবণতা থেকে নয়। আবেগ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ক্ষেত্র বিশেষে একেক রকম হয়, সেটা আবেগ দিয়েই মাপা উচিত। তাহলেই আমরা মানবিক হতে থাকবো, এক্সট্রিমিস্ট থেকে সহনশীল হতে থাকবো। আমি আমার বাংলাদেশকে বেশিই ভালোবাসি, তা না হলে হয়ত আমেরিকাতেই থেকে যেতাম। এখানে ফিরে আসতাম না, নিজের দেশের প্রতি শ্রদ্ধা আছে বলেই বাংলাদেশের জন্য কাজ করি, আর বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব বোধ করি।
বাংলাদেশেকে নিয়ে যেন কোন ভুল তথ্য না থাকে, পৃথিবীর সবাই যেন বাংলাদেশের সাফল্যকে জানে,সেটাই মনে প্রাণে চাই আমি। ইচ্ছাকৃত কোন ভুল কথা অবশ্যই বলবো না, এটুকু বোঝার জন্য অনেক বেশি শিক্ষিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই, একটু সহজ স্বাভাবিক মানবিক উচ্ছ্বাস প্রকাশের দৃষ্টিকোণ দেখলেই বোঝার কথা।
তবে এজন্য ইচ্ছাকৃত ব্যক্তিগত আক্রমনণ, গালিগালাজ, আর হ্যারেসমেন্ট করা কিন্তু অপরাধ। আমাদের স্যোসাল মিডিয়ার আমাদের প্রতিটি লাইক শেয়ার কমেন্ট আমাদের শিক্ষা আর পারিবারিক পরিচয়কেই প্রকাশ করে। কাউকে কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয় বরং ভুল বোঝাবুঝির যেন অবসান ঘটে তাই লিখলাম। সবাই ভালো থাকবেন। এই দুর্যোগের সময়ে পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকবেন। ধন্যবাদ।