হাইকোর্টের মতে ধর্ষণের এক মামলায় ‘ভুল আইনে’ বিচার করায় ভোলার চরফ্যাশনের আব্দুল জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ ১০ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বার আদালত বৃহস্পতিবার এই স্থগিতাদেশ দেয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
প্রতিবেশীর পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে ‘প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের’ অভিযোগে ২০০১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চরফ্যাশন থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়। ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট ওই মামলায় ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল জলিলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জেল আপিল করেন জলিল। এরপর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ জলিলের যাবজ্জীবন সাজা বাতিল করে মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য বিচারিক আদালতে পাঠান।
এক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনের সময় জলিল নাবালক ছিলেন কিনা তা নির্ণয় করতে দিকনির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। কারণ, অপরাধ সংঘটনের সময় জলিলের বয়স উল্লেখ ছিল ১৬ বছর। অভিযোগপত্র জমার সময় তার বয়স ১৫ বছর। আর ওই সময়ে কার্যকর শিশু আইন-১৯৭৪ অনুযায়ী ১৬ বছর পর্যন্ত ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে ধরা হত। কিন্তু শিশু আইনে জলিলের বিচার না করে তার বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ৮ মার্চ ভোলার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত আবার জলিলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এই সাজার বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন জলিল। সে জেল আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর রায় দেয় বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই রায়ে ‘ভুল আইনে’ বিচার করায় আব্দুল জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে জলিলের দণ্ডাদেশ বাতিল করে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলা হয়।
এছাড়া হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন, ‘এই আদালত মনে করে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক আসামি আব্দুল জলিলকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করাই যুক্তিযুক্ত। তাই আব্দুল জলিলের জীবনের ১৪টি বছরের বিনিময়ে রাষ্ট্রপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করার আদেশ প্রদান করছে।’
সম্প্রতি বিলম্ব মার্জনাসহ এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। যেখানে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ স্থগিত চাওয়া হয়। অত:পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আব্দুল জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ ১০ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। সেই সাথে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়।