আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পেরোলেই রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের অম্লান স্মৃতি বিজড়িত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর। ইতিমধ্যেই ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছর পূর্ণ হবে আগামীকাল। বাঙালি জাতির জন্য এই দিবসটি হচ্ছে চরম শোক ও বেদনার, অনদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত।
একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন সর্বস্তরের মানুষ। দেশজুড়ে পালিত হবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিনটি পালন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
একুশের প্রথম প্রহরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে ধুয়েমুছে প্রস্তুত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদি। প্রতি বছরের মতো এবারও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিসহ চৌহদ্দিতে রঙ করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা বেস্টনি, সিসিটিভি স্থাপন ও শহীদ মিনারের মূল বেদির উত্তর দিকের দেয়ালে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেয়াল লিখনসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রবেশমুখসহ চারপাশে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য পুলিশ সদস্যরা ডিউটি করছেন। চারপাশে বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পরিচ্ছন্নকর্মীরা শহীদ মিনার সহ আশপাশের রাস্তা পরিস্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রঙিন হয়ে উঠেছে শহীদ মিনার ও এর চারপাশের দেয়ালগুলো। শহীদদের স্মরণে দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়েছে একুশের পংক্তিমালা। সকাল থেকে শহীদ মিনারের আশপাশের রাস্তাগুলো আলপনার রঙে উজ্জ্বল করে তুলছেন চারুশিল্পীরা।
একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ আজ রাতে একুশের প্রথম প্রহর ১২টা ০১ মিনিটে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর পরপরই শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গসহ অন্যান্য ভিভিআইপিদের পুস্পস্তবক অর্পন শেষে জনসাধরণের জন্য প্রবেশদ্বার খুলে দেয়া হবে। সাধারণ দর্শনার্থীরা পলাশী হয়ে জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে আর্চওয়ের মধ্যদিয়ে শহীদ মিনারে আসবে। সকলের সুবিধার্থে গমনাগমনের পথ নির্দেশিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বড় ব্যানারে টাঙ্গানো থাকবে।
দিনটি পালন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ রাজধানীজুড়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সুদৃঢ়, নিশ্ছিদ্র ও সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। শহীদ মিনার ও তার আশপাশে স্থাপন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সামনে স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে এই ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক রিয়েল টাইম মনিটরিং করা হবে। সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। শহীদ মিনার এলাকায় প্রবেশের পূর্বে প্রত্যেক দর্শনার্থীকে একাধিক আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশী করে প্রবেশ করতে দেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে ৫টি সেক্টরে বিভক্ত করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে জানিয়ে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন মোটরসাইকেল পেট্রোল, কার পেট্রোলসহ পোষাকধারী সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোষাকে র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এছাড়াও শহীদ মিনারে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, সুইপিং ফোর্স, স্পেশাল স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।