চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ভালো ঋণগ্রহীতাদের ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার নির্দেশ

ভাল ঋণগ্রহিতাদের সংশ্লিষ্ট ঋণের বিপরীতে আদায়কৃত সুদের ন্যূনতম ১০ শতাংশ রিবেট বা প্রণোদনা সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে প্রতি বছর গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হলে এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। ২০১৯ হিসাববর্ষ থেকেই এ নির্দেশনা কার্যকর করতে হবে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ভাল ঋণগ্রহীতার অর্থের প্রয়োজন হলে তাদের ঋণ সুবিধা আরো বাড়াতে হবে।

এক্ষেত্রে ভাল ঋণগ্রহীতার হিসেব নির্ণয় করতে হবে চলমান বা তলবী বা মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস শেষে বিগত ১২ মাস (অর্থাৎ বিগত বছরের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্য ন্ত)।

তবে ভাল ঋণগ্রহিতা হতে হলে গ্রাহককের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।

ভাল ঋণগ্রহীতা কারা:

১. চলমান ঋণগ্রহীতার ঋণ হিসাব ক্রমাগতভাবে সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর মাস ও পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকলে এবং মঞ্জুরী পত্র বা নবায়ন পত্রের শর্তানুসারে উক্ত ঋণ হিসাবে লেনদেন সন্তোষজনক হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

২. তলবী ঋণগ্রহীতার সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর মাস ও পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে গৃহিত সব তলবী ঋণ অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় সমন্বিত হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে ধরা হবে।

৩. মেয়াদী ঋণগ্রহিতার ঋণ হিসাব বিগত ১২ মাসের সব কিস্তি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নিয়মিতভাবে পরিশোধিত হলে এবং সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর মাস ও পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ভালো ঋণগ্রহীতা বলা হবে।

৪. কোন ঋণগ্রহীতার একাধিক ঋণ থাকলে প্রতিটি ঋণের জন্য পৃথকভাবে উল্লিখিত শর্তসমূহ পরিপালন করলে তিনি ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

তবে সব ক্ষেত্রেই কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিগত ১২ মাসে কোন গ্রাহক বা তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিরূপমানে শ্রেণিকৃত ঋণ থাকলে ওই গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন না।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী স্ব স্ব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে ‘ভাল ঋণগ্রহীতা প্রণোদনা’ দিতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। একই সাথে এই নীতিমালা প্রচারের জন্য ব্যাংকগুলোর প্রত্যেক শাখায় এমন স্থানে নীতিমালাটি লিখে প্রদর্শন করতে হবে যাতে সহজে গ্রাহকের নজরে পড়ে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হবার পর সংশ্লিষ্ট বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে প্রাপ্যতা অনুযায়ী ঋণগ্রহীতাদেরকে প্রণোদনা পরিশোধ করতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রণোদনা বাবদ প্রদত্ত অর্থ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের থেকে প্রাপ্ত সুদ খাতকে ডেবিট করে অথবা প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করে প্রদান করতে পারবে।

তবে কোন বিশেষ কারণে কোন ঋণগ্রহীতাকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রণোদনা দেয়া সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট হিসাববর্ষের আর্থিক বিবরনী আবশ্যিকভাবে সমপরিমাণ অর্থের প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে ঋণগ্রহীতার প্রাপ্য প্রণোদনা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

ভাল গ্রাহকের জন্য আরো সুখবর হলো- প্রণোদনা সুবিধা পাওয়ার জন্য তাদের আবেদনের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংক স্ব-উদ্যোগে ভালো ঋণগ্রহীতা চিহ্নিত করে প্রাপ্যতা অনুযায়ী তাদের প্রণোদনা সুবিধা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে প্রণোদনা দেয়ার আগে ঋণগ্রহীতার থেকে এই মর্মে প্রত্যয়ন গ্রহণ করতে হবে যে, ঋণগ্রহীতার নিজ নামে বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে অপর কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিগত ১২ মাসে বিরূপমানে শ্রেণিকৃত কোন ঋণ ছিল না এবং বর্তমানেও নেই।

ভালো ঋণগ্রহীতারা যাতে সময়মত ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে উৎসাহিত হয় সেলক্ষ্যে তাদের প্রাপ্য প্রণোদনা যথাসময়ে প্রদান নিশ্চিত করে প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি শাখা পর্যায়ে বা আঞ্চলিক পর্যায়ে নিষ্পত্তি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে, এক্ষেত্রে সার্কুলারের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রিবেট হিসাবায়ন ও প্রদানের বিষয়গুলো ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ভালো ঋণগ্রহিতাদের ঋণ তথ্য পরবর্তী সময় স্ট্যান্ডার্ড থাকা সাপেক্ষে সিআইবিতে স্ট্যান্ডার্ড গুড বোরোয়ার বা (আদর্শ ভাল ঋণ গ্রহীতা) হিসেবে রিপোর্ট করতে হবে।

তবে পুনঃতফসিলকৃত বা পুনর্গঠিত ঋণগ্রহীতাদের জন্য ওই প্রজ্ঞাপনে সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

এছাড়াও ভালো ঋণগ্রহীতাদের বিভিন্ন উৎসাহব্যঞ্জক প্রণোদনা দিতে হবেঃ

যেমন, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী ভালো ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ সুবিধা (রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ডিসকাউন্ট সুবিধা ইত্যাদি) দিতে হবে।

ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রতি বছর ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ সনদ প্রদান করতে হবে।

ব্যাংকের সেরা ১০ জন ভালো ঋণগ্রহীতার ছবিসহ তাদের ব্যবসা সফলতার সংক্ষিপ্ত চিত্র ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে হবে।

এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত গ্রাহকদের ছবি, প্রোফাইল ইত্যাদির সমন্বয়ে ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ বুকলেট বা ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে হবে।

ব্যাংকগুলো বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভালো ঋণগ্রহীতাদের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদেরকে সম্মাননা জ্ঞাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।