‘অভিনয় করতে আমার ভালো লাগে। আমার কাছে এটা প্রেমের মত। তাই কাজ করি। ভালো চরিত্র পেলে বেশি ভালো লাগে। গড়পড়তা হলেও আপত্তি থাকেনা।’ এ মূহুর্তে বিভিন্ন টেলিভিশনে চলছে তার ৫টি ধারাবাহিক নাটক। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে সে প্রসঙ্গে এমনটি বলেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, স্বাধীনতার আগে এবং পরে বাংলাদেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মুখ সৈয়দ হাসান ইমাম।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার, পরিচালক-এমনই বহুমাত্রিক। ভালোবাসা রবীন্দ্রসংগীত, খেলা আর অভিনয়। পেয়েছেন একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকের মত পুরস্কার।
১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে হাসান ইমামকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় শিল্পীদের প্রতিবাদী সংগঠন বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ যারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বর্জন করেন। গণআন্দোলনের চাপে পাকিস্তানী সরকার ৮ মার্চ থেকে বেতার টেলিভিশনের দায়িত্ব বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ২৫ মার্চের পর হাসান ইমাম মুজিব নগরের চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে ১৯৭১-এ স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের নাট্য বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে নিযুক্ত হন।
সৈয়দ হাসান ইমাম মুজিবনগর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সালেহ আহমেদ নামে বাংলা সংবাদ পাঠ করতেন। হাসান ইমাম ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সংবাদ পাঠ এবং নাট্য বিভাগের দায়িত্বভার বহন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জহির রায়হানকে সভাপতি ও হাসান ইমামকে সাধারণ সম্পাদক করে মুজিব নগরে চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী সমিতি গঠন করা হয় যাদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দলিল ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মিত হয়।
চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত এবং জনপ্রিয় সেলিব্রেটিভিত্তিক আলাপচারিতার অনুষ্ঠান ‘তারকা কথন’ এর অতিথি হয়ে এসেছিলেন তিনি। মৌসুমী বড়ুয়ার উপস্থাপনায় ‘তারকা কথন’ এ সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘এখন বেশিরভাগ কাজ নিছক বাণিজ্যের জন্য হয়। কষ্ট হয়। বিজ্ঞাপনদাতাদের ডিক্টেশন বেড়েছে। যা শুভ নয়। সংবাদ পাঠ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন বেশির ভাগ সময় দেখা যাচ্ছে যারা সংবাদ পাঠ করছে তারা পরিস্থিতি সম্পর্কে না জেনে সংবাদ পাঠ করছে। এ ক্ষেত্রে বিবিসি’কে মান ধরে এগনো যায়। তাদের যারা সংবাদ পাঠক তারা বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে। ফলে তাদের পাঠে বিষয়ের আহ ধরা পড়ে। নতুনরা সংবাদ পাঠ করবেনা কেন? অবশ্যই করবে তবে প্রশিক্ষণ খুব জরুরী।’
উপস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাষার আধুনিকীকরণ মানে বিকৃতি নয়। মানুষকে উন্নততর করার জন্য সংস্কৃতি কলুষিত করার জন্য নয়।
‘তারকা কথন’ শেষে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান সন্ধ্যার আগে আশুগঞ্জে পৌছতে হবে বিজয় মেলায়। ৮২ বছর বয়সেও এমন ছোটাছুটির শক্তি আসে কোথা থেকে প্রশ্নে সহাস্যে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমার প্রাণের কাজ। ভালোবাসা থাকলে প্রাণশক্তি এমনিতে আসে। দেশকে ভালোবাসার চাইতে বড় আনন্দ আর কি থাকতে পারে?’