টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় প্রায় ৩৬ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরেই। তবে ওই সকল সড়কের সংস্কার না হলেও চলতি অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ভূঞাপুর-টাঙ্গাইল সড়কের সিংগুরিয়া বাজার হতে নিকরাইল বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার ভালো সড়ককে খানাখন্দ দেখিয়ে সংস্কারের জন্য দরপত্রের আহ্বান করেছে।
দরপত্রে অংশ নিয়ে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার দরপত্রে কাজ পেয়েছে টাঙ্গাইলের অবনি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সিডিউল পরিবর্তন করে এলজিইডি কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশে কাজ করায় অভিযোগ উঠেছে কোটি টাকা হরিলুটের।
অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, সংস্কার কাজে পুরাতন সড়ক ভেঙ্গে নতুন করে সড়ক নির্মাণসহ দুই পাশে দুই ফুট করে মাটি ভরাটের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এলজিইডি টাঙ্গাইল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী’র মৌখিক নির্দেশেই সিডিউল মোতাবেক কাজ করছেনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী মিন্টু মিয়ার উপস্থিতিতেই ওই সড়কের উপরে ১০ থেকে ১৫ মিলিমিটার পাথর কুচি ও বিটুমিন ফেলে দায়সারাভাবে কাজ করছে।
এলজিইডির অসাধু কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাতের জন্যই এমন ভালো সড়কে কাজের দরপত্র আহবান করেছে এবং হরিলুটের জন্যই সিডিউল মোতাবেক কাজ করছেন না। তারা অারো বলেন, সহকারী প্রকৌশলী মিন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে এমন একাধিক কাজ করে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত চিঠি প্রেরণ করা হলেও কোন কাজ হচ্ছেনা।
একাধিক ঠিকাদার দাবি করেছেন, ভূঞাপুর এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী মিন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরণের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তার কাজই হলো ভালো সড়কগুলি সংস্কারের জন্য স্টিমেন্ট তৈরি ও পাশ করিয়ে আনা। এরপর হ্রাস মূল্যে আস্থাভাজন ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে বিপুল অংকের টাকা হরিলুট করা।
তাদের দাবি, এলজিইডির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা ও এনিয়ে কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার ভয়ে ঠিকাদাররা প্রতিবাদ না করায় তিনি বারবারই হরিলুটের সুযোগ নিচ্ছেন।
সিডিউল মোতাবেক কাজ না হওয়ার কথা স্বীকার করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হেকমত জানান, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই ওই কাজটি আমরা পেয়েছি। তবে কাজ করতে এসে দেখি সিডিউল অনুযায়ী এখানে কাজ করা সম্ভব নয়। সড়কের দু-পাশে এজিং না থাকায় পুড়ানো বেড উঠানো হলে পুরো রাস্তাই বাতিল হয়ে যাবে। তাই বিষয়টি এলজিইডির কর্মকর্তারাদের জানানো হয়। পরে কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসে এভাবেই কাজ করার মৌখিক নির্দেশে দিয়েছেন। তারা উপস্থিত থেকে কাজ করিয়ে ও বুঝে নিচ্ছেন। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।
ভালো সড়কে কিভাবে স্টিমেন্ট করলেন এবং স্টিমেন্ট মোতাবেক কেন কাজ করা যাচ্ছেনা জানতে চাওয়া হলে স্টিমেন্টকারী ভূঞাপুর এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী মিন্টু মিয়া বিষয়টির কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে একটি রি-স্টিমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। তবে তিনি রি-স্টিমেন্টের কোন কাগজ দেখাতে পারেননি।
এদিকে মৌখিক নির্দেশে সিডিউল পরিবর্তন করার বিধি না থাকলেও এলজিইডির টাঙ্গাইল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের মৌখিক নির্দেশেই কাজ করানো হচ্ছে বলে জানান ভূঞাপুর এলজিইডির ওই সহকারী প্রকৌশলী।
মৌখিক নির্দেশের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার জানান, এ সড়কে অনেক লোক যাতায়াত করে এবং অল্প খরচে সড়কটি সংস্কার করা যাচ্ছে বলেই তা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব সড়কই আমরা সংস্কার করবো।