চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভারতের ‘স্লেজিং’ ঠেকাতে প্রস্তুত টাইগার সমর্থকরা

বার্মিংহাম থেকে: যেকোনো আসরে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই মাঠে উত্তাপ, যুদ্ধের দামামা! খেলোয়াড়রা লড়েন ২২ গজে, দর্শকরা গ্যালারিতে। আরেকবার গলা ফাটানোর যুদ্ধে সামিল হওয়ার আগে বার্মিংহামের টাইগার সমর্থকদের মাঝে চলছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির চেষ্টা।

ব্রিটিশ এশিয়ান বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার এন্ড কালচারাল সোসাইটি-মাটি’র পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে অভিনব এক উদ্যোগ। যুক্তরাজ্যের মধ্যভূমি বার্মিংহাম ও বিভিন্ন শহর থেকে খেলা দেখতে আসা টাইগার সমর্থকরা এজবাস্টন স্টেডিয়ামের বাইরে একত্রিত হবেন ম্যাচের দিন সকালে।

বার্মিংহাম শহরের নির্দিষ্ট তিনটি পয়েন্টে প্রথমে সংঘবদ্ধ হবেন তারা। লাল-সবুজের জার্সি পরে গর্বের পতাকা হাতে নিয়ে ফুটপাথ ধরে আগাবেন স্টেডিয়ামের দিকে। সবাই জড়ো হয়ে মিছিল করতে করতে ঢুকবেন গ্রাউন্ডে। কাগজে-কলমে এ আয়োজনের নাম সাপোর্টার্স র‌্যালি।

স্থানীয় প্রশাসনের কাছে থেকে মিলেছে অনুমতিও। আয়োজন শান্তিপূর্ণ করতে টাইগার সমর্থকদের মাঝ থেকেই কাজ করবেন ৩০ জন ভলান্টিয়ার। এ আয়োজনের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আশরাফুল ওয়াহিদ দুলাল চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, ‘আমরা প্রায় ৪ হাজার দর্শক একসঙ্গে মাঠে ঢুকবো। সব প্রস্তুতি শেষ। মঙ্গলবারের ম্যাচটা আমরা উপভোগ করতে চাই এবং জিতে স্মরণীয় করতে চাই।’

২০১৭ সালে এখানে এজবাস্টনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনাল ঘিরেও দর্শকদের আগ্রহ ছিল প্রবল। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভালো হওয়ায় আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও অবশ্য সংখ্যায় ভারতীয় দর্শকদের ছাড়াতে পারবে না বাংলাদেশের সমর্থকরা।

টাইগার সমর্থকদের নিয়ে আয়োজনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাইফুর রেজা পথিক জানালেন, ‘মাঠে সমর্থন রেশিও থাকতে পারে ৬০-৪০। দুই বছর আগে অবশ্য ব্যবধান আরও বেশি ছিল। গ্যালারিতে টাইগারদের সমর্থন ছিল ৩০ ভাগের মতো। সেবার ভারতীয় সমর্থকদের টিপ্পনি সহ্য করতে হয়েছিল। কখনও কখনও তাদের স্লেজিং আমাদের মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত করে। দুই দেশের দর্শকদের মধ্যে কথার লড়াই হবে এবং এরমধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।’

প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বাংলাদেশ দলের টিম হোটেল হায়াত রিজেনসি থেকেই মিছিল নিয়ে মাঠে যাবেন টাইগার সমর্থকরা। তবে আইসিসির প্রটোকলের কারণে মাঠের কাছাকাছি জায়গা থেকেই মিলতে হবেন সবাইকে। এ উদ্যোগের খবর পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ দলের কানেও। অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বুধবার হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় উচ্ছ্বাস নিয়েই বলছিলেন সে কথা।

বার্মিংহাম শহরের কভেন্ট্রি রোডে বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্ট ‘পঞ্চখানা’ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশি কমিউনিটির একত্রিত হওয়ার স্থান। মাঝবয়সী লোকদেরই যাতায়াত বেশি সেখানে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিশ্বকাপ আড্ডা। এখন আড্ডার একমাত্র বিষয় বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ ও মাঠে যাওয়ার প্রস্তুতি। সকলের বিশ্বাস, ভারতকে হারিয়ে এবার মোক্ষম জবাব দেবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের সময় যত ঘনিয়ে আসছে টিকিট নিয়ে দেন-দরবার তত বাড়ছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রবাসী বাঙালিদের যারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি, তারা এখন পকেট ভারী করে হন্যে হয়ে ঘুরছেন আর মুখে জপছেন যেকোনো মূল্যে ২ জুলাই এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যেতে চাই। ৬০ পাউন্ডের টিকিট কালোবাজারে ২০০ পাউন্ডে কিনেও আনন্দে আত্মহারা অনেকে।

গোল্ড, প্লাটিনাম ক্যাটাগরির টিকিটের দাম আরও চড়া। ভিন্ন মাধ্যম থেকে সেটি কিনে নিতে খরচ করতে হবে ৩০০ পাউন্ডের কাছাকাছি।

টাইগার ভক্তদের জন্য বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের টিকিট এখানে সোনার হরিণ। বিশ্বকাপ শুরুর আগে অনলাইনে মুহূর্তেই শেষ হয়ে গিয়েছিল এজবাস্টনের ম্যাচের টিকিট। যার দুই-তৃতীয়াংশ ভারতীয় সমর্থকদের দখলে। শেষবেলায় খেলা দেখার তাড়নায় বাংলাদেশি দর্শকদের রাতের ঘুম তাই হারাম!

পাউন্ড আছে টিকিট নেই! নেটওয়ার্কের জাল ছড়িয়ে দিয়ে কেউ কেউ চেনা-জানা ক্রিকেটারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন উপায় না দেখে। তাতেও যদি ভারতীয় দর্শকদের সঙ্গে সংখ্যার ব্যবধান কিছুটা কমিয়ে আনা যায়!