চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে নজরুল বেশি ভালোবাসা পান’

অনিন্দিতা কাজী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতনী। কবির ছোট ছেলে কিংবদন্তি গিটার বাদক কাজী অনিরুদ্ধর মেয়ে। বাঁশরীর আয়োজনে ‘লাখো কণ্ঠে বিদ্রোহী কবিতা’ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাংলাদেশে এসেছেন। অনুষ্ঠান ও কবির নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে।

কেমন আছেন?
খুব ভালো আছি?

কতদিন পর বাংলাদেশে এলেন?
আমি মাঝে মাঝেই আসি। এখানে আমার দাদু আছেন। শুধু ছুতো খুঁজি। একটু ছুতো পেলেই চলে আসি। তবে এবারের আসাটা আমার জন্য খুব উত্তেজনাময়।

উত্তেজনাময় কেন?
একটা ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে এসেছি। কত যে ভালো লাগছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। লাখো মানুষ দাদুর লেখা কবিতা আবৃত্তি করবে। এটা সামনে থেকে দেখব।  অংশ নিব। অনেক বড় বিষয় না?

‘লাখো কণ্ঠে বিদ্রোহী কবিতা’ আবৃত্তি করতে দেখে বিশেষ কোনো স্মৃতি মনে পড়ছে?
হ্যাঁ। ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম আবৃত্তি শুনেছিলাম আমার জেঠু কাজী সব্যসাচীর মুখে। সেদিনের কথা মনে পড়ছে। খুব ছোট ছিলাম। তখন এতটা বুঝতাম না। কবিতার মানেও বুঝিনি। এখন বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এই কবিতার গুরুত্ব ও গভীরতা বুঝি। এই কবিতা শুধু বাঙালি জাতির না, সমগ্র বিশ্বের শোষিত মানুষের কবিতা হয়ে গেছে। আমার কাছে বিদ্রোহী কাবিতাকে মনে হয় আগুনের গোলা।

এই আয়োজনের কথা কীভাবে জানলেন?
আমাকে বাঁশরীর পক্ষ থেকে জানানো হলো ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লাখো কণ্ঠে আবৃত্তি হবে। আমাকে থাকতে হবে।

শুনে আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
আমি জাস্ট থমকে গেলাম। কয়েক মিনিট কথা বলতে পারিনি। বুঝতে পারছিলাম না কী বলব। আমার কী বলা উচিৎ। বিদ্রোহী কবিতাটি আমাদের পরিবারে আলাদাভাবে দেখা হয়। তাই বলে ঢাকায় এত বড় আয়োজন হবে ভাবতে ও বিশ্বাস করতে সময় লেগেছে। কারণ আজ পর্যন্ত কেউতো এভাবে ভাবেনি। যে কবিতা লক্ষ লক্ষ মানুষের অধিকারের কথা বলেছে সেই কবিতা লাখো মানুষের কণ্ঠে একত্রে উচ্চারণের এই উদ্যোগ একই সঙ্গে বিস্ময়কর ও চমৎকার লেগেছে।

তারপর?
বাংলাদেশে এসে রিহার্সাল দেখলাম। এদের মুখে বিদ্রোহীর আবৃত্তি শুনে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।

নজরুল মেহনতী মানুষের কথা বলেছেন বলেই মে দিবসে বিদ্রোহী আবৃত্তির এই আয়োজন?
হ্যাঁ। নজরুল সারাজীবন এই শ্রমিকদের কথা বলেছেন। বঞ্চিতের কথা বলেছেন। শোষিতের পক্ষে কথা বলেছেন। মে দিবসের ইতিহাসের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে শোষণের, শ্রমিকের ও বিদ্রোহের ইতিহাস। নজরুল যে মানুষের কবি হতে চেয়েছিলেন আজ তাই যেন পরিপূর্ণতা লাভ করল।

মহান মে দিবসে এই আয়োজন দেখে কী মনে হচ্ছে?
একটা বিষয় গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছি বাংলাদেশের মানুষ তাকে কতটা ভালোবাসে। এর থেকে ভালো করে শ্রদ্ধা জানানোর উপায় বোধহয় নেই।

বললেন বাংলাদেশের মানুষ কবিকে অনেক ভালোবাসে। যদি জানতে চাই নজরুলকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ না বাংলাদেশ, কারা এগিয়ে?
এটা নজরুলের দুর্ভাগ্য যে তিনি যেই দেশে যেই মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানে ভালোবাসা পাননি। আমি সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই- নজরুল নিজে বলেছেন, ‘আমি যে দেশে, যে সমাজে জন্মগ্রহণ করি না কেন? আমি দৈব্য। আমি সকলের। সকল মানুষের।’ সকলের হয়ে ওঠার চেষ্টায় তিনি সফল। কিন্তু যেই বাংলায় তিনি জন্মেছেন দীর্ঘসময় সেখানে উপেক্ষিত ছিলেন। তারপরও তাকে তো বিভাজনের চেষ্টা করা হয়। ‘তিনি হিন্দু কবি না মুসলিম কবি।’ আসলে তিনি যে সকল মানুষের কবি এই বোধটা সব মানুষের হয়ে ওঠেনি। সেকারণেই মনে হয় কবিতে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। নজরুলকে কিছুটা অবহেলিত থাকতে হয়।
জন্মদিন আর মৃত্যুদিনের মধ্যেই তাকে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখন অবস্থা পাল্টাচ্ছে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি সংস্কৃতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। নজরুলচর্চা বাড়ছে। রবীন্দ্রচর্চা বাড়ছে। তিনি নিজে নজরুলপ্রেমী। রবীন্দ্রপ্রেমী। নজরুল ইনিস্টিটিউট নতুন নতুন সব কাজ হাতে নিচ্ছে।
তবে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে নজরুল বেশি ভালোবাসা পান। আজকের এই আয়োজনই তার বড় প্রমাণ। তাকে ভালোবাসা, তাকে শ্রদ্ধা জানানো, তার সৃষ্টি সংরক্ষণ ও ছড়িয়ে দেওয়ার যে প্রয়াস বাংলাদেশে দেখা যায়। জীবনের শেষ সময় তিনি যে সম্মানিত হয়েছেন। তাকে জাতীয় কবি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এসব বাংলাদেশের মানুষের কবিকে যে গভীরভাবে ভালোবাসে তারই প্রমাণ। এবং কবির প্রতি বাংলাদেশের ভালোবাসার সাথে আর কারো ভালোবাসার তুলনা হয় না।

আপনি তো পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়াতে কাজ করেন?
হ্যাঁ। কলকাতার টিভি চ্যানেল ‘তারা বাংলা’য় অনেক দিন কাজ করেছি। আবৃত্তি ও উপস্থাপনা করি। দাদুর  ২৬টি ছড়া আর কবিতা নিয়ে অডিও অ্যালবাম করেছি। অ্যালবামে আছে ‘কাঠবিড়ালী’ ও ‘লিচু চোর’–এর মতো জনপ্রিয় সব কবিতা।

চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
চ্যানেল আই অনলাইন ও আপনাকে ধন্যবাদ। মহান মে দিবসে যারা বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে এসেছেন সবাই ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

ছবি: সংগৃহীত