বাংলাদেশে ভারতের গরু পাচার ও রপ্তানি বন্ধে নেওয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে দেশটির উত্তর প্রদেশের নবনির্বাচিত বিজেপি সরকার। সংশ্লিষ্টদের ধারণা ভারতের গরু নীতি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাবে।
তবে এদেশের মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত গরু পাঠানো বন্ধ করলেও কোনো ক্ষতি হবে না। সাময়িকভাবে দুই-এক মাস মাংসের দাম বাড়লেও পরে ধীরে ধীরে তা কমবে। এটা বাংলাদেশের জন্য ভালই হবে। কারণ এতে ভারত নির্ভরতা কেটে যাবে। বছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেচে যাবে।
সম্প্রতি ‘উত্তর প্রদেশের গরু নীতি বাংলাদেশেও আঘাত হানতে পারে’ এমন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর প্রদেশের নতুন বিজেপি সরকার রাজ্যে সব কসাইখানা বন্ধের বিষয়টি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশে। কারণ ভারত থেকে চোরাই পথে ও বৈধ উপায়ে অনেক গরু যায় সেখানে।
এতে আরো বলা হয়, অধিকাংশ বড় আকারের গরু-মহিষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও গুজরাট থেকে আনা হয়। পরে সেগুলো পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উত্তরবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর গরু পাহারাদারদের (গরু পাচার রোধ করতে গঠিত বিশেষ পুলিশ বাহিনী) ধারণা উত্তর প্রদেশের রাস্তাগুলো পাচারকারীদের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে প্রতিবেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাবে।
এর আগে ২০১৫ সালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, লাখ লাখ গরু বাংলাদেশে পাচার হয়। সে সময় গরু পাচার বন্ধে পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেন।
তখন পুলিশ জানিয়েছিল, প্রত্যেকটি রাজ্যের সরকার গরু পাচার বন্ধে উদ্যোগ নিলেই সীমান্ত পর্যন্ত গরু আসতে পারবে না। আর বিএসএফের জন্যও পাচার বন্ধ করা সহজ হবে।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, বাংলাদেশে সারা বছরে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ গরু জবাই হয়। শুধু কোরবানি ঈদে জবাই হয় ৫০-৫৫ লাখ গরু। এর সিংহভাগই (৭০-৮০ শতাংশ) আসে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে। বাকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আসে ভারত থেকে।
মাংস ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ১৪ লাখ গরু এসেছিল ভারত থেকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখে।
গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছেন, বর্তমানে বাংদেশে প্রচুর খামার গড়ে উঠেছে। পাহাড়ি এলাকার খামারিরা অনেক গরু উৎপাদন করছে। সরকার উদ্যোগ নিলে দেশে উৎপাদিত গরু দিয়েই চাহিদা মেটানো যাবে। এমনকি রপ্তানিও করা যাবে বিদেশেও।
ভারত গরু রপ্তানি বন্ধ করলে বাংলাদেশে এর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ভারত গরু রপ্তানি বন্ধ করলে কোনো ক্ষতি হবে না। দুই-এক মাস মাংসের দাম একটু বেশি হলেও তা স্বাভাবিকে ফিরে আসবে। তবে এই সময়টাতে বাংলাদেশ নেপাল, ভুটান ও মায়ানমার থেকে গরু এনে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পারে।
মাংস ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ভারতীয় গরুর চালান বন্ধ হলে দেশে খামারের পাশাপাশি কৃষক পর্যায়েও গরু পালন বাড়বে। দুধের চাহিদাও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মেটানো যাবে। এমনকি সীমান্ত অঞ্চলে যেসব মানুষ গরু ‘ব্যবসার’ সঙ্গে যুক্ত, তারাও গরু পালন ব্যবসায় মনোযোগী হবে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো এ জন্য প্রণোদনা বা ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে।
গরু নিয়ে ভারত বাংলাদেশের সাথে রাজনীতি করছে এমন অভিযোগ করে রবিউল আলম বলেন, প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পশু পালনে উৎসাহ দিতে সরকার খামারিদের অন্তত একটা করে গরু বাছুর দিলে ভারতের ওপর নির্ভরতা কেটে যাবে। এতে দেশের প্রচুর অর্থও বেচে যাবে।