বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চতুর্থ আসর মাঠে গড়াতেই উঠেছিল বিতর্ক। রংপুর রাইডার্সের ক্রিকেটার জুপিটার ঘোষ বিসিবির কাছে অভিযোগ করেন, দলের ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন তাকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। পরে দুজনকেই বিপিএল চলাকালীন মাঠে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় বিসিবি। শুরু হয় তদন্ত। দীর্ঘ সময় গড়িয়ে গেলেও যার ফল আলোর মুখ দেখেনি।
বিসিবির কাছে অভিযোগের আগেই দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন জুপিটার, এমন দাবি করে রংপুর রাইডার্স কর্তৃপক্ষ। বিপিএলের শেষদিকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছিল গত বছরের ৫ নভেম্বর অনৈতিক কাজে ধরা পড়ায় জুপিটারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই কারণেই সে দলকে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
রাইডার্স কর্তৃপক্ষের অভিযোগের সত্যতা মেলে টিম হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে। যাতে দেখা যায় বিপিএল চলাকালে গত ২ নভেম্বর মাঝরাতে একজন নারীকে নিয়ে নিজের হোটেল রুমে যাচ্ছেন জুপিটার। পরে ৪০ মিনিট রুমে অবস্থানের পর দুজনকে একসঙ্গে বেরিয়ে আসতেও দেখা যায়। রাইডার্স কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ম্যানেজারের অনুমতি না নিয়েই মাঝরাতে হোটেলে একজন নারীকে নিয়ে যান জুপিটার।
ওই ঘটনার তদন্ত কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে এবং কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা শিগগগিরই জানা যাবে বলে জানিয়েছেন বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য শেখ সোহেল। মঙ্গলবার বিসিবি কার্যালয়ে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একের পর এক সিরিজ হচ্ছে দেশের বাইরে। গভর্নিং কাউন্সিলে যারা আছেন তাদের অনেকেই ব্যস্ত ছিলেন সিরিজ নিয়ে। আমরা সবাই একসাথে হতে পারিনি। এই সিরিজটা শেষ হলে আমরা সবাই একসাথে বসে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নেব।’
ঘটনার পর ঘরোয়া ক্রিকেটের আরও দুটি লিগ এনসিএল-বিসিএল মাঠে গড়িয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল শুরু হবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। যেখানে অংশ নেবেন জুপিটার ঘোষ। পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন বাগেরহাট থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার।
চলতি ক্রিকেট মৌসুম শেষের পথে চলে এলেও সুরাহা হচ্ছে না জুপিটার-সানোয়ারের সেই বিতর্কিত বিষয়টি। বিপিএলের পঞ্চম আসর আয়োজনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে গভর্নিং কাউন্সিল। এবারও নভেম্বরে মাঠে গড়াবে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টি-টুয়েন্টি লিগ। খেলা হবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের ভেন্যুতে। গত আসরে তিন পর্বে ভাগ হয়ে খেলা হয়েছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে।
বিপিএলের শুরুর দিকের নিয়মিত ভেন্যু খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে এবারও খেলা থাকছে না। খুলনাকে ভেন্যু না করার পেছনে বড় কারণ নিরাপত্তা। অন্যান্য স্টেডিয়ামের চেয়ে খুলনা স্টেডিয়ামের উত্তর-দক্ষিণ গ্যালারির উচ্চতা অনেক কম। শেখ সোহেল বলেন, ‘নিরাপত্তার ক্ষেত্রে খুলনা ভেন্যুতে একটু ঝুঁকি আছে। আমরা চেষ্টা করছি স্টেডিয়ামটা যদি একটু বড় করা যায়, তাহলে খুলনায় খেলানো যায়। স্টেডিয়ামের কাজের বিষয়টি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দেখে। আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। বোর্ড থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রথমে যারা স্টেডিয়ামে কাজ করেছিল তারা অনেক ভুলত্রুটি ও অন্যায় কাজ করেছিল নির্মাণের ক্ষেত্রে। যার ফল আমরা ভোগ করছি। নতুন করে তো আর স্টেডিয়াম করা সম্ভব নয়। কিভাবে উন্নত করা যায় তা নিয়ে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’
পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) দেশটির বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের ওপর ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। চলছে তদন্তও। বিপিএলে পাকিস্তানি ক্রিকেটার আনার ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবির এই পরিচালক বলেন, ‘পাকিস্তান বোর্ড যাদের অনাপত্তিপত্র দেবে তারা খেলতে পারবে। আমরা এসব প্লেয়ারের ক্ষেত্রে সবসময় সতর্ক থাকি। বিপিএল সবসময় আমরা পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই। অপরাধে কোন ছাড় দিতে চাই না।’
অনেক বিতর্কের পরও পাকিস্তান সুপার লিগে খেলতে দেখা গেছে বিশ্বের বড় বড় তারকা ক্রিকেটারদের। বিপিএলের মতো জনপ্রিয় আসরে কেন খুব বেশি সংখ্যক তারকা ক্রিকেটার দেখা যায় না সে শেখ সোহেল বলেন, ‘আমরা যখন বিপিএল আয়োজন করি তখন অনেক বড় বড় প্লেয়ারদের অন্য জায়গায় খেলা থাকে। টাইমিংয়ের জন্য তারা আসতে পারে না। অন্য কোন কারণ নেই। বিপিএলের সময় পরিবর্তন করাও সম্ভব হয় না। ঘরোয়া লিগ থাকে, জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের খেলা থাকে বলে।’