টিএসসিতে বৃষ্টির মধ্যে তরুণ-তরুণীর ছবি তুলে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ মারধরের শিকার হয়েছেন। আরেক ফটো সাংবাদিক নাছির উল ইসলাম তাকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের ফটকে তাকে মারধর করা হয়।
নাছির উল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, “শুধুমাত্র বেয়াদবির কারণে তাকে মারা হয়েছে। ঐ ছবির জন্য মারা হয় নাই। সে আমার জুনিয়র, তাকে সবসময় সতর্ক থাকতে বলি। খাওয়ার টাকা না থাকলে তাকে খাওয়াই। তাকে কি আমি ২ টা থাপ্পড় দিতে পারি না? কিন্তু সে মাঝেমাঝেই ঝামেলা করে। আমরাই বাঁচাই ওকে। আজকে বোঝানোর সময় বেয়াদবি করেছে। তাই মেরেছি। এর আগে অভিজিৎ ইস্যুতে বিতর্কের মধ্যে পড়েছিল। আমরাই ব্যাকআপ দিয়েছিলাম।”
নাছির উল ইসলামের সাথে কথা বলার সময় আরও অনেক মিডিয়ার ফটো সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
নাছির উল ইসলাম বলেন, “জীবনকে চায়ের অফার করি। তাকে বলি, তুই সবসময় সমালোচনা তৈরি করিস ক্যান? রিস্ক নিয়া এসব কাজ করিস ক্যান? আমি তাকে সতর্ক করি। বলি তুই বারবার এরকম ঝামেলায় জড়াস ক্যান? এর আগে শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের ছবি তুলে সে স্ট্যাটাস দিয়েছিল ছাত্রলীগ বর্বর। তখনও বলেছিলাম যে এসব ঝামেলায় জড়াস ক্যান? এগুলো বোঝানোর সময় সে খারাপভাবে রিঅ্যাক্ট করে তাই ২টা থাপ্পড় মেরেছি।”
মারধরের শিকার ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, “আমাকে মেরেছে এটা সঠিক। আমাকে যখন মারা হয় তখন সেখানে অনেকেই ছিলেন। আপনি প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বললে পুরো ঘটনা জানতে পারবেন। আমি অনেক মানসিক চাপের মধ্যে আছি। এখন কিছু বলতে পারব না।”
দুপুর ২টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে মারধরের সময় উপস্থিত ছিলেন এমন একজনকে পাওয়া যায়। জানতে চাইলে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, “প্রথমে আমি দেখলাম জীবনকে ওনারা ডাকছেন। ডেকে বসানোর পর প্রথমে গালাগালি করেছেন। তারপর বলেছেন, কেন ছবিটি ব্যবহার হলো। এক পর্যায়ে তাকে উপর্যুপরি চড় থাপ্পড় এবং লাথি দেয়া হয় বেশ কয়েকবার। তাকে এই এরিয়ায় আসতে নিষেধ করা হয়। হুমকি দিয়ে বলে তোরে এদিকে দেখলে মারব। জোরপূর্বক তার ছবি ডিলিট করানো হয়। মারার সময় বলে তোর জন্য প্রক্টরের কাছ থেকে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝাড়ি শুনতে হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ছবিটি আমি দেখেছিলাম। আমার এক সহকর্মী আমাকে দেখিয়েছে। মারধরের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের সাথেও সাংঘর্ষিক। এটা আমাদের এখতিয়ারে না। যে ছেলেকে মারা হয়েছে সেও আমাকে কিছু জানায়নি। মারধরের বিষয়টি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।”
মার খাওয়ার পরপরই জীবন আহমেদ তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে পোস্ট করা ছবিটি সরিয়ে ফেলেন এবং দুটি স্ট্যাটাস দেন। একটিতে তিনি লিখেন ” আজ থেকে সাংবাদিকতা থেকে বিদায় নিলাম” এবং অন্যটিতে লিখেন “ছবিটা পোস্ট করার জন্য আমি স্যরি।”
অবশ্য তার কিছুক্ষণ পরে জীবন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন তার আইডি কে বা কারা হ্যাক করেছিল।
জীবন আহমেদ এর আগেও বেশ কিছু আলোচিত ছবি তুলেছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকের সামনে আঙ্গুল নাচিয়ে হুমকি দেওয়ার ছবি, অভিজিৎ রায়ের রক্তাক্ত ছবিসহ বেশকিছু ছবি এর আগে ভাইরাল হয়েছিল।