শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থা জানতে চাওয়া কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
ধর্ষণের পর সন্তান জন্ম দেওয়া এক শিক্ষার্থীর ভর্তি জটিলতাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীর করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
সেই সঙ্গে ধর্ষণের পর সন্তান ধারণকারী ওই মেয়েকে রাজশাহী সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। যে মেয়েকে ভর্তির শর্ত হিসেবে স্বামী পরিত্যক্তা লিখতে হবে, বলেছিল নার্সিং কলেজ।
আজ আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনীক আর, আইনুন নাহার সিদ্দিকা ও ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণসচিব, আইনসচিব, নারী ও শিশুসচিব, মহিলা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নার্সিং অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ১৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘মেয়েটি এখন কী করবে?’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন ফারিহা ফেরদৌস ও নাহিদ সুলতানা জেনি নামে দুই আইনজীবী।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ জুন দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ধর্ষণের শিকার হন মেয়েটি।
ধর্ষকের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রামের লোকজন চাপ দিতে থাকেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে এ নিয়ে সালিসও হয়। কিন্তু সেখানে অভিযুক্ত যুবক সবকিছু অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে সালিস ভেঙে যায়। এদিকে প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে মেয়েটির পরিবার মামলাও করতে পারছিল না।
এক পর্যায়ে ধর্ষিতা সন্তানসম্ভবা হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয় মেয়েটিকে। তখন ওসিসি থেকেই ধর্ষণ মামলা করা হয়।
মামলার পর পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওই যুবক, মেয়ে এবং তার সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় প্রমাণ হয় ওই যুবকই শিশুটির বাবা। পরে আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। এক পর্যায়ে আদালত ওই মেয়েটিকে ‘মহিলা সহায়তা কর্মসূচি’র রাজশাহী বিভাগীয় আবাসন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সেখানে থেকেই মেয়েটি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
পরীক্ষা চলাকালে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।
এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.১৯ পেয়ে পাস করেন মেয়েটি। পরে ওই আবাসন কেন্দ্রে থেকেই এইচএসসি পরীক্ষায়ও অংশ নেন।
পরীক্ষা শেষে ওসিসির আইনজীবী আশুরা খাতুন এবং জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী দিল সেতারার সহযোগিতায় মেয়েটিকে বাড়িতে রেখে আসেন।
এরই মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এবার জিপিএ-৩.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় মেয়েটি।
এদিকে গত ৩০ মে বিচারিক আদালতের রায়ে ধর্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। আদালতের রায়ে সন্তানের দায়ভার বাবাকে নিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাবার ১ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
এইচএসসি পাশের পর রাজাহী সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হতে গেলে সৃষ্টি হয় জটিলতার। বিবাহিত না হয়েও ভর্তিচ্ছু মেয়েটি তখন এক সন্তানের মা।
রাজশাহী সরকারি নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ মনিজ্জা খাতুনকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সময় অবশ্যই অবিবাহিত লিখতে হবে। অথবা স্বামী পরিত্যক্তা লিখতে হবে। তা ছাড়া সন্তান হওয়ার বিষয়টি পরীক্ষায় ধরা পড়বে। এই ক্ষেত্রে মেয়েটিকে স্বামী পরিত্যক্তা লিখতে হবে।”
কিন্তু মেয়েটি বিবাহিতও না, স্বামী পরিত্যাক্তও না। ফলে কোনো দলেই সে পড়েন না।
এই অবস্থায় হাই কোর্টে রিট করলে সোমবার রুলসহ ভর্তির এ আদেশ দিল আদালত।