বল হাতে ধারাবাহিকভাবে উইকেট পাচ্ছেন। ব্যাটে আসতে শুরু করেছে রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অলরাউন্ডার পরিচিতির ভিত শক্ত হতে শুরু করেছে মেহেদী হাসান মিরাজের। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজে সাকিব আল হাসান না থাকায় মিরাজকে ঘিরে তাই বড় হচ্ছে প্রত্যাশার বেলুন।
ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে চমকে এসেছিল মিরাজের নেমে পড়া। ম্যাচে খেলেছিলেন ৩২ রানের ইনিংস। মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকেন ২০.৫ ওভার। ওপেনিং জুটি থেকে আসে ১২০ রান। অধিনায়কের হঠাৎ সিদ্ধান্তে উদ্বোধনীতে নেমে মিরাজ বুঝতে পেরেছেন এমন পরিস্থিতি আসতে পারে আগামীতেও। নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছেন সেভাবেই।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নামার আগে বুধবার মিরপুরে অনুশীলনের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মিরাজ। কথা বলেন এশিয়া কাপে ওপেনিংয়ে নামা, আসন্ন সিরিজ, নিজের ব্যাটিং-বোলিং ও বিশ্বকাপ ভাবনা নিয়ে।
সাকিব নেই, দলের সেরা বোলার নেই, যা আপনার উপর বাড়তি চাপ ফেলবে; আপনি কি ভাবছেন এই ব্যাপারে?
আসলে এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক, সাকিব ভাই আমাদের সাথে নেই। তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে দলে ফিরবেন। আর এটা চাপ না। এটা আমার কাছে বাড়তি দায়িত্বের মতন। যেহেতু সাকিব ভাই নেই, দায়িত্ব থাকবে বোলিংটা আরেকটু বেশি ভালো করার। পাশাপাশি যারা স্পিনার আছেন, তাদেরকে উৎসাহ দিবো আরও ভালো করার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকে বোলিংয়ে বেশ উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বোলিং নিয়ে কী কাজ করেছেন?
আমার কাছে মনে হয় আমি আগের চিন্তার তুলনায় এখন একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করছি। কিভাবে কি করতে হবে, এইসব নিয়ে মানসিকভাবে একটু শক্ত হয়েছি। আর বোলিংয়ে কিছু ভেরিয়েশন এনেছি, ওইগুলো হয়তো কাজে দিচ্ছে।
কী ধরণের বৈচিত্র্য এনেছেন বোলিংয়ে?
বৈচিত্র্য বলতে, আগে প্রায়সময় এক গতিতেই বল করতাম। সিমের পজিশন একটু অন্যরকম ছিল আগে। সিমের গতিপথ পরিবর্তন করেছি। আগে ৪৫ ডিগ্রিতে বল করতাম। এখন ৯০ ডিগ্রিতে করছি। একটু মিক্স করে বল করছি। এগুলোই, গতিপথ পরিবর্তন করে কিছু ভেরিয়েশন এনেছি।
টেস্টে আপনি উইকেটটেকিং বোলার, কিন্তু ওয়ানডেতে রান আটকানোর চিন্তা নিয়ে বল করছেন কেনো?
ওয়ানডেতে প্রথমদিকে যখন বল করি, প্রতিপক্ষ দলের ওপেনাররা যখন রান তাড়া করে খেলে, তখন আমার দায়িত্ব থাকে রান আটকে বল করা। যদি রান থামিয়ে রাখতে পারি তাহলে আমার যে বোলিং পার্টনার থাকবে, সে উইকেট বের করে নিতে পারবে। ওয়ানডেতে সবসময় রোলটা থাকে রান থামিয়ে রাখার। হয়তো উইকেট পাচ্ছি না, হয়তো আমার পার্টনার পাচ্ছে বা আরেকজন পাচ্ছে। দিনশেষে কিন্তু দলের সাহায্য হচ্ছে। এটাই চেষ্টা করি। আমার হয়তো উইকেটের দরকার নেই। আমার পার্টনার যে আছে, হয়তো মাশরাফী ভাই, মুস্তাফিজ, সাকিব ভাই বা রুবেল ভাই উইকেট বের করে দিবে, যারাই আছে বোলাররা। আমি রান থামিয়ে রাখতে পারলে দল চাপে পড়বে, আর অন্য বোলাররা উইকেট পাবে। এটাই আমার চেষ্টা, এরমধ্যে যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে আমি উইকেট পেয়ে যাবো।
এশিয়া কাপে ওপেন করেছেন, আরেকবার সুযোগ পেলে কি ওপেন করবেন?
ফাইনাল ম্যাচ ওপেন করেছি, আমিও ভাবিনি ফাইনালে ওপেন করব। মাশরাফী ভাই ম্যাচের আগের রাতে বলেছেন, সবাই যারা সিনিয়র আছে সবাই অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। এই জন্য অনেক আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। এটা থেকে শিক্ষা নিয়েছি, যেকোনো মুহূর্তে আমাকে দলের প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় নামতে হতে পারে। আমার মানসিকতা থাকবে, যেকোনো সময় এমনকিছু হতে পারে।
বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে এসেছে। আগামী বিশ্বকাপে আপনার প্রথম বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন?
সবার স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ খেলার। যদি সুস্থ থাকি, তাহলে সুযোগ পেলে অবশ্যই ভালো খেলার চেষ্টা করব। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভালো খেলার স্বপ্ন তো সবার থাকে। অবশ্যই দলের সবাই চাইবে ভালো করতে। সবাই তো ভালো করার জন্যই অনুশীলন করছে। অনেকে খেলবে, অনেকে খেলবে না। সবাই চেষ্টা করছে।
সাকিব না থাকায় নিজেকে দলের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার ভাবেন?
সাকিব ভাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। আমার এমন কোনো অনুভূতি আসে না। সাকিব ভাই যখন খেলেন, তখন চেষ্টা করি অলরাউন্ডার হিসেবে দলের জন্য ছোট ছোট অবদান রাখার। তিনি অনেক উঁচু মানের ক্রিকেটার। বাংলাদেশকে অনেকদিন সার্ভিস দিয়ে আসছেন। দীর্ঘদিন র্যাঙ্কিংয়ে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার ছিলেন। তার সাথে আসলে আমার তুলনা চলে না(হাসি)।
এশিয়া কাপের ফাইনালের মতো ম্যাচে ওপেন করা, এই অভিজ্ঞতা সামনে কীভাবে কাজে লাগাতে চান?
চাপ কিন্তু সবসময় থাকে। এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচটায় অনেক চাপ ছিল। এটা আমাকে ভবিষ্যতে অনেক কাজে দিবে। বড় বড় ইভেন্টে যখন ফাইনাল ম্যাচ হবে, ডু-অর-ডাই ম্যাচ হবে, তখন এই ম্যাচগুলো অনেক কাজে দিবে।
ব্যাটিং সামর্থ্যের মূল্যায়ন কম করা হচ্ছে কি?
না, সবাই কিন্তু আমাকে ব্যাটিং নিয়ে অনেক সাপোর্ট করে। সবাই বলে, আমি অনেক ভালো ব্যাট করতে পারি। মাঝখানে একটু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে। ব্যাটিং নিয়ে এখন কাজ করছি। সামনে হয়তো অবদান রাখতে পারব।
যে দায়িত্বই দেয়া হয় আপনাকে, আপনি সবসময় রাজি হন, দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেন। এটাতে ঝুঁকি থাকে না?
আমি সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। কঠিন অবস্থার চ্যালেঞ্জ উপভোগ করি। আর পেছন থেকে যখন টিম ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট দেয়, আমাদের সিনিয়র প্লেয়ায়রা, সবাই যখন ব্যাক আপ করে, নিজের আত্মবিশ্বাসটা অনেক বেড়ে যায়। ফাইনালের আগের রাতে যখন বলা হয় ওপেন করতে হবে; তখন মাশরাফী ভাই, রিয়াদ ভাই বলল- ‘করতে পারবি, সমস্যা নাই’। তখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসটা বাড়ল। তখন তারা আরও কিছু কথা বলেছে, যা শুনে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস পেলাম। নিজেরও আত্মবিশ্বাস থাকে। আর যখন পেছনে ব্যাকআপ পাই সিনিয়র প্লেয়ারদের, আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। ওটাই কাজে লেগেছে, ভালো করার পেছনে।