চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ব্লগার হত্যার প্রথম রায়ে দুই ঘাতকের ফাঁসি

গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলায় দুই আসামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের দু’জনকেই ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।  

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ প্রথমবারের মতো কোনো ব্লগার হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দীপ এবং রেদোয়ানুল আজাদ রানা। দীপ আটক থাকলেও রানা পলাতক রয়েছেন।

এ মামলায় অন্য আসামীদের মধ্যে মাকসুদুল হাসান অনিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা না দিলে তাকে আরো ১ বছর কারাগারে থাকতে হবে।

বাকি আসামীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। এদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান শায়খুল হাদিস মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীকে ৫ বছরের কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত।

অন্য তিন আসামী এহসানুর রেজা রুম্মান, মো. নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ ও নাফির ইমতিয়াজকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে প্রত্যেকে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আরেক আসামী সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে ৩ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই হাজার টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। 

২০১৩ সাল থেকে চলতি বছর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ছয় জন ব্লগারকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যার প্রথম শিকার ছিলেন ব্লগার রাজীব হায়দার। 

গত সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৩-এর বিচারক সাঈদ আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারিক রায়ের দিন নির্ধারণ করেছিলেন।

চলতি বছর ১৮ মার্চ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান শায়খুল হাদিস মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ ৮জনকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন। পরে ওই আদালত থেকে গত ১১ মে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আদেশে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৫৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মাহবুবুর রহমান ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ যুক্তিতর্কে অংশ নেন।

গত বছর ১৪ অক্টোবর মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেন মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন। ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়, আটক আসামিরা আদালতে রাজীব হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। শুধু মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করলেও অপর স্বীকারোক্তি দানকারী আসামিরা রাজীবকে হত্যার জন্য রাহমানী নির্দেশ দিয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন।

২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মিরপুরে পলাশনগর এলাকায় ব্লগার রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডা. নাজিম উদ্দীন পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ব্লগার রাজীবের পুরো নাম আহমেদ রাজীব হায়দার, যিনি ‘থাবাবাবা’ নামে ব্লগ লিখতেন। পেশায় তিনি একজন স্থপতি ছিলেন।