জঙ্গি সংগঠন আইএসে যোগ দেয়া ব্রিটিশ নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল করা বৈধ বলে রায় দিয়েছেন সে দেশের হাইকোর্ট। এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিলের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দিয়ে বুধবার এ রায় দেয়া হলো।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে জন্ম হওয়া আশরাফ মাহমুদ ইসলাম ২০১৫ সালের এপ্রিলে মাত্র ১৮ বছর বয়সে জঙ্গি সংগঠন কথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএসে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে পালিয়ে সিরিয়া চলে যান। ওই সময় তিনি ঢাকায় অবস্থিত একটি ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ-লেভেলের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এর শাস্তি হিসেবে ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব অ্যাম্বার রাড আশরাফের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল মানে এই নয় যে আশরাফ ‘রাষ্ট্রহীন’ হয়ে যাচ্ছেন। তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব থেকেই যাচ্ছে।
আশরাফের পরিবারকে পাঠানো এক চিঠিতে অ্যাম্বার রাড ২০১৭ সালের জুলাইয়ে জানান, আশরাফের কর্মকাণ্ড যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, এ আশঙ্কায় তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে।
নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আশরাফের বাবা আবদুল্লাহ ইসলাম ব্রিটিশ হাইকোর্টে মামলা করেন। তার আবেদন ছিল, বর্তমানে ২২ বছর বয়সী আশরাফকে যেন তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে এনে ব্রিটিশ আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
আশরাফ বর্তমানে সিরিয়ায় কুর্দি নিয়ন্ত্রিত একটি সামরিক কারাগারে বন্দী আছেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলার বিচারকাজ শুরু হলে জঙ্গিবাদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হতে পারে। এই মৃত্যুদণ্ড থেকে ছেলেকে বাঁচাতে চান আবদুল্লাহ।
গত বছরের মে মাসে আবদুল্লাহ ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের মাধ্যমে ছেলের কাছ থেকে একটি চিঠি পান। সেখান থেকেই তিনি জানতে পারেন আশরাফকে অন্য আরও কয়েকজন আইএস যোদ্ধার সঙ্গে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।
চিঠিতে আশরাফ বাবাকে বলেছিলেন: ‘প্লিজ আমাকে সাহায্য করার জন্য যা করার দরকার করো, যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় করো। আমি এখানে চার মাস হয় আছি এবং কেউই জানি না এখানে কী হচ্ছে।’
কিন্তু বুধবার মামলাটিকে ‘নো মেরিট’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন বিচারপতি পেপারঅল। মামলার রায়ে তিনি বলেন, আশরাফ সিরিয়ায় বন্দী আছেন। মধ্যপ্রাচ্যে তিনি বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন এবং বিচারে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এ সবকিছুর জন্য আশরাফের নিজের কর্মকাণ্ডই দায়ী। তিনি স্বেচ্ছায় সিরিয়া গিয়ে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।
‘এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র সচিব শুধু তার নাগরিকত্বটাই কেড়ে নিয়েছেন। আশরাফ যত বিপদে আছেন তার কোনোটিই এ সিদ্ধান্তের কারণে নয়। বরং সবকিছুই হচ্ছে আইএসের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহে,’ বলেন আদালত।
বিচারপতি বলেন, আশরাফের জন্ম হয়েছিল লন্ডনে। স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুবিধাই তিনি পেয়ে এসেছেন, ব্যারিস্টার বাবা এবং মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
কিন্তু বাবার এত যত্ন ও নজরদারির পরও আশরাফ সিরিয়া পালিয়ে যান এবং তার এক মাস পর তার পরিবার টের পায় যে তিনি আইএসে যোগ দিয়েছেন।