বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় রোম-ওয়াশিংটন-দুবাইয়ের মতো শহরকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। মঙ্গলবার এধরনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ‘মার্সার’। ২০২১ সালের এই জরিপের জন্য ২০৯টি শহরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জীবনযাপনের ব্যয়ের উপরে নির্ভর করে চালানো জরিপে তালিকায় ঢাকার অবস্থান ৪০তম, গত বছর ২৬তম স্থানে ছিল। ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় ঢাকার নিচে রয়েছে ব্যাংকক, রোম, ওয়াশিংটন, মুম্বাই, ম্যানিলা, টরন্টো, নয়াদিল্লি, মিউনিখ, ব্রাসেলস, বার্লিন ও মস্কো অন্যতম।
জীবনযাত্রার খরচ এবং ব্যবসা করার খরচের উপর নির্ভর করে বানানো এই জরিপকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে পুরোবিশ্বের গণমাধ্যম। বিদেশীরা তাদের কাঙ্খিত শহরে কর্ম বা ভ্রমণে আসার আগে অনেকে এই ধরণের তথ্যের উপরে নির্ভর করে থাকেন। রাজধানী ঢাকার একসময়ের বড় সমস্যা ছিল বিদ্যুতের অভাব, বর্তমানে সেই সমস্যা নেই বললেই চলে। যানবাহন-আবাসন-চিকিৎসা ও প্রযুক্তি সুবিধায়ও এগিয়েছে রাজধানীসহ দেশ। অবকাঠামোগত নানা কর্মকাণ্ডের ফলে দীর্ঘস্থায়ী জ্যাম থাকলেও চলাচলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। জলাবদ্ধতা, মশক নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহনের আধুনিকায়নসহ বেশকিছু সমস্যায় মনোযোগী হলে ঢাকার চিত্র যে পাল্টে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ব্যবসা করার খরচে বিভিন্ন অফিস-আদালতের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ খরচও জরিপে ব্যয়বহুল হবার অন্যতম কারণ। ১/২ দিনের কাজ কোনো কারণ ছাড়াই অনেকসময় ৭/৮দিনে গিয়ে ঠেকলে পারিপার্শ্বিক খরচও বেড়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন অফিশিয়াল ফি ও সার্ভিস চার্জও বাড়ানো হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। এইসব নানা কারণসহ স্বল্প ভৌগলিক অবকাঠামোর মধ্যে বহু মানুষের নাগরিক আয়োজনে খরচ-ব্যয় বাড়াটা স্বাভাবিক।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর একটি বড় পাওয়া। বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভূক্ত হয় ১৯৭৫ সালে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভূক্ত হতে ৩টি শর্ত রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ৩টি শর্তই পূরণ করে। পরে ২০২১ সালেও ৩টি শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয়তা দক্ষতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের বিভিন্ন শহরের ওই জরিপে নানা সমস্যা-সম্ভাবনার শহর ঢাকার এই অবস্থান ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক, তা নিয়ে নানারকম ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ রয়েছে। তবে আমরা মনে করি, বাংলাদেশ মানেই বন্যা-অভাবী মুখ নয়তো কম দামের শ্রমিক, এই ধারা থেকে বের হবার সময় এসেছে। জীবনযাত্রা ও সেবার মান উন্নত করার পাশাপাশি সঠিক ভাবমূর্তি বিনির্মাণে সংশ্লিষ্টরা মনোযোগী হলে রাজধানী ঢাকার ব্যয়বহুল হয়ে ওঠা যুক্তিযুক্ত হবে।