যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে রিজার্ভ অর্থচুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ফিলিপিন্সের ব্যাংকিং আইনের দুর্বলতা। ফিলিপিন্স প্রকাশ পেয়েছে কালো টাকার স্বর্গ হিসেবে।
গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের আমেরিকান অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করার সঙ্গে সঙ্গেই ইলেকট্রনিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। জালিয়াতরা বুঝে-শুনেই অর্থপাচারের গন্তব্য হিসেবে দেশটিকে বেছে নিয়েছিলো। কারণ তারা জানতো, ফিলিপিন্সের ব্যাংকিং আইনের ফাঁক গলিয়ে একবার টাকাগুলো পার করে দিতে পারলে সেগুলো বের করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।
ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার্থে ফিলিপিন্সের নীতিমালা বিশ্বের কঠোরতম ব্যাংক আইনগুলোর একটি। কিন্তু অর্থ জালিয়াতি রোধে প্রণীত আইনের হাত থেকে দেশটির ক্যাসিনোগুলো মুক্ত। অথচ ক্যাসিনোতেই অবৈধ টাকার লেনদেন সবচেয়ে সহজ।
বিশাল এই অর্থচুরি সফলই হয়েছিলো ব্যাংক আইনে এই ‘ক্যাসিনো ফাঁক’ রাখার কারণে।
ব্যাপক পরিমাণে অর্থ একবারে চুরি করে পার পেতে হলে জালিয়াতদের দরকার ছিলো চুরির পর খুব দ্রুত টাকাটা ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে বের করে ক্যাসিনোতে ভাঙ্গিয়ে ফেলা। তারা সেটাই করেছিলো।
চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত চেয়ে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের সময় লেগেছিলো মাত্র চার দিন। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেই অতোগুলো টাকা দিব্বি গায়েব হয়ে যায় ফিলিপিন্সের ক্যাসিনোগুলোতে। রয়ে যায় শুধু হত্যার হুমকি, ঘুষ আর ধোঁয়াশায় থাকা কিছু ব্যক্তির ভূমিকা। এবং সামনে আসে একজন ব্যাংক ম্যানেজারের নাম, যিনি আসলে অপরাধী না পরিস্থিতির শিকার তা এখনো স্পষ্ট নয়।
শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিটের ম্যানেজার মায়া সান্তোস দেগুইতোসহ পাঁচজনকে তলব করে দেশটির বিচার বিভাগ। মামলা হয় দেগুইতোর নামে। অবশ্য বক্তব্যে বারবার জালিয়াতিতে সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন দেগুইতো।
‘আমি কোনো দোষ করিনি। এটা যদি কোনো দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকে, আমি এক্ষুণি জেগে উঠতে চাই,’ দেশ ছাড়ার সময় ম্যানিলা বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষ যাওয়া আটকে দিলে এবিএস-সিবিএন টেলিভিশনকে বলেন দেগুইতো, ‘আমি প্রত্যেকটা দিন আতঙ্কের মধ্যে কাটাচ্ছি।’
দেগুইতোর ব্যাংক বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থটি গ্রহণ করে। তিনি দাবি করেন, ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে তিনি শুধু অর্থটি স্থানান্তর করেছেন, তাও আবার ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো টানের নির্দেশে। অবশ্য ব্যাংক প্রেসিডেন্ট দেগুইতোর এ অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ব্যাংক ম্যানেজার দেগুইতো দোষী নাকি শুধু একজন বলির পাঁঠা, তা বের করার জন্য আলাদা একটি তদন্ত শুরু করেছেন ফিলিপিনো সিনেটররা। তবে তিনি যে নাটের গুরু নন, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত।