ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগ দাবি করেছেন দেশটির লেবার পার্টির এমপি ও বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বলেন, বরিসের ভুল বক্তব্যের জন্য যদি টিউলিপের নির্বাচনী এলাকার অধিবাসীকে জেলে একটা দিনও বেশি কাটাতে হয় তবে এর ফল হিসেবে বরিসকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ইরানে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে জেলে থাকা ব্রিটিশ-ইরানি নাগরিক নাজানিন জাগহারি-র্যাটক্লিফের মুক্তির দাবিতে চালানো প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ রেহানার মেয়ে এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনের এমপি টিউলিপ। নাজানিন সম্পর্কে বরিসের করা বেফাঁস মন্তব্যের জবাবেই এসব কথা বলেন তিনি।
নাজানিনকে ২০১৬ সালের এপ্রিলে তার মেয়েসহ তেহরান বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় যুক্তরাজ্যের হয়ে ইরানে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে। বরাবরই নাজানিন তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। কিন্তু তারপরও তাকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের জেল দেয়া হয়।
গত সপ্তাহে এ সম্পর্কে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি কমিটিকে বরিস বলেন, ‘আপনারা যদি ভেবে দেখেন নাজানিন জাগহারি-র্যাটক্লিফ সেখানে করছিলেন, আমি যতদূর বুঝি তিনি সেখানে শুধু মানুষকে সাংবাদিকতা শেখাচ্ছিলেন।’ সাজা পাওয়ার এই ঘটনাকে ‘খুবই হতাশাজনক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নাজানিন সাংবাদিকতা শেখাতে গিয়েছিলেন – বরিস জনসনের এই উক্তি এই নারীকে নতুন করে বিপদে ফেলে দিয়েছে। কেননা নাজানিন এবং তার নিয়োগ কর্মকর্তা প্রতিবারই বলেছেন, তিনি শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ইরান গিয়েছিলেন। আর এর ফলে শনিবার হুট করে এক অনির্ধারিত শুনানিতে আদালতে ডাকা হয় নাজানিনকে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উক্তিকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে বলা হয়, এতদিন নাজানিন মিথ্যে বলে এসেছেন; তিনি আসলে ইরানের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন।
নাজানিনের পরিবারসহ ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের আশঙ্কা, বরিসের বক্তব্যের পর তার সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হতে পারে। একই আশঙ্কা থেকে টিউলিপ বরিসের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
টিউলিপ বলেন, ‘বরিস জনসনকে অবশ্যই তার মন্তব্য ফিরিয়ে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি ঠিক করে দিতে হবে। যদি তিনি তা না পারেন, তাহলে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোটাই তার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’
নাজানিনের স্বামী এবং অন্যান্য এমপিদের চাপে বরিস জনসন মঙ্গলবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফকে ফোন করে তার আগে করা বক্তব্য ব্যাখ্যা করেন এবং নাজানিনকে কারামুক্ত করে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি এ-ও বলেন, কথাগুলো তার আরও স্পষ্ট করে বলা উচিত ছিল।
সবশেষে বরিস ফোনকলে বলেন, যেহেতু তার কথার কোনো যাচাই করার মতো ভিত্তি নেই, সেহেতু যেন মামলার বিষয়বস্তুর সঙ্গে একে জড়িত না করা হয় এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে নাজানিনকে ছেড়ে দেয়া হয়।