চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বৈষম্যও থাকবে,বৈষম্য বিরোধী লড়াইও থাকবে

দুনিয়া জুড়ে বৈষম্য বিরোধী লড়াই রয়েছে। যুগ যুগ ধরে তা চলে আসছে কিন্তু বৈষম্য মুক্ত পৃথিবী গড়া আজও সম্ভব হয়নি। কখনো হবে বলেও বোধ হয় না। বিষয়টা অনেকাংশেই এরকম যে সেলুনে গিয়ে চুল ছাঁটার মতো। চুলের দৈর্ঘ অসহনীয় মাত্রায় চলে গেলেই মানুষ সেলুনে যায়। নাপিত চুল ছেঁটে তার জীবিকা নির্বাহ করে। অসহনীয় মাত্রায় না গেলে কেউ চুল ছাঁটতো না আর নাপিতের ঘরের চুলোতে আগুনও জ্বলতো না।

পরিবারের কর্তার চোখে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও বৈষম্যের চোখে দেখা রয়েছে। সামাজিক ক্লাব, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠন, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক সর্বমহলেই বৈষম্যের কালো প্রাচীর বিরাজমান।

বৈষম্য অসহনীয় মাত্রায় দৃশ্যমান হলেই বৈষম্য বিরোধী লেখক বুদ্ধিজীবীদের কদর বাড়ে। তাদের চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ফসলের বাজার কাটতি বাড়ে। চুল ছেঁটে যেমন নাপিত চুলকে সহনীয় মাত্রায় রাখতে পারেনা। বৈষম্যবিরোধী লেখক বুদ্ধিজীবীরাও তেমনই সমাজকে বৈষম্যমুক্ত করতে পারবেনা। নরসুন্দরের (নাপিত) প্রয়োজনীয়তার মতোই তাদের সামাজিক প্রয়োজনীয়তা। বৈষম্যের যথেচ্ছাচার প্রতিরোধে তাদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য।

এক ভাই ম্যাজিস্ট্রেট আরেক ভাই পানের দোকানদার। এক্ষেত্রে পিতাসহ পরিবারের কাছে ম্যাজিস্ট্রেটই বেশি মূল্যায়িত হবেন। এক পরিবারের লোক হিসেবে পানের দোকানদারের মূল্যায়ন তার সমপর্যায়ের হবেনা। মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে একজন এমপিকে যেমন আগের কাতারে নেয়ার জন্য মুসল্লিরা তৎপর হবে একজন বয়স্ক দিন মজুরের ক্ষেত্রে এরকমটি হবে না। এখানে এমপিও মুসল্লি, দিন মজুরও মুসল্লি সুতরাং সকলই সমান এমনটি বিবেচিত হবেনা। তবে দিন মজুর যদি ধনাঢ্য হয়ে যায়,এলাকায় তার শক্তিশালী গোষ্ঠী থাকে,মসজিদ ফান্ডে তার মোটা অংকের ডোনেশন দেয়ার ঘটনা থাকে তখন তার মূল্যায়ন বাড়বে।

মাওলানা সাহেবকে জমিদার বাড়িতে দাওয়াত দেয়া হলে তা তাৎক্ষনিক ভাবেই রক্ষিত হবে। কিন্তু গরীব কামলার বাড়িতে দাওয়াত দিলে তা রক্ষা নাও হতে পারে। মাওলানা সাহেবের দাওয়াত রক্ষা করা,না রক্ষা করার মাঝেও বৈষম্য। দাওয়াতে খানাপিনা শেষে যে বাড়িতে মাওলানা সাহেবকে বখশিস দেয়ার রেওয়াজ আছে সে বাড়িতে দোয়াটা বেশি সুর দিয়ে , আবেগ দিয়ে দীর্ঘায়িত ভাবে সম্পন্ন হয়।যে বাড়িতে বখশিস দেয়ার রেওয়াজ নেই সেখানে দোয়াটা সম্পন্ন হয় অতিসাদামাটা ও সংক্ষিপ্ত ভাবে।

বিয়ে বাড়িতে দাওয়াতে গেলে ভিআইপিদের জন্য চেয়ার ও সাধারণের জন্য মাদুর। এমন কোনো তত্ত্ব ও দর্শন নেই যা পৃথিবী হতে বৈষম্যের বিলুপ্তি ঘটাবে।

বৈষম্যবিরোধী লড়াইটা মূলতঃ সেলুনের নাপিতের ভূমিকার মতো। সমাজ সভ্যতা ও মানুষের জন্য নাপিতের যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনই প্রয়োজন রয়েছে বৈষম্যবিরোধী তাত্ত্বিক, দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবীদের।যদি নাপিত না থাকতো মানুষের চুল দাড়ি একাকার হয়ে অদ্ভুত বন্য চেহারায় প্রতিফলিত হতো।

তেমনই বৈষম্যবিরোধী লেখা,লড়াই না থাকলে বৈষম্যের কালো প্রাচীরে পুরো পৃথিবী পদদলিত হয়ে রক্তাক্ত হয়ে মুখ থুবড়ে কাঁদতো। বাস্তবতা হলো এই বৈষম্যও থাকবে,বৈষম্য বিরোধী লড়াইও থাকবে। বৈষম্যের চির বিলুপ্তি ঘটবেনা কোনোদিন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)