‘আমি এখানে প্রথমবার বাজাতে আসলেও দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, সাড়া পৃথিবীতেই বাজিয়েছি কিন্তু বেঙ্গলের মতো ক্লাসিক মিউজিক নিয়ে এমন একটা চিন্তা আর কোথাও কারো মধ্যে দেখিনি। তাদের চিন্তাকে দাঁড়িয়ে স্যালুট করা উচিত। তারা যেভাবে ভেবেছেন ক্লাসিক মিউজিক নিয়ে এটা অসাধারণ একটা ব্যাপার। ইউরোপ আমেরিকাতেও এমনটা দেখেনি। কোনো ফেস্টিভালে আসলাম, গাইলাম আর চলে গেলাম এমনটা কিন্তু বেঙ্গল নয়। বেঙ্গল যে ক্লাসিক মিউজিককে একটা ফেস্টিভালে আটকে রাখেনি এবং নিয়মিত ওয়ার্কশপ এবং শিক্ষাদানের বিষয়টি অব্যাহত রেখেছে নিজেদের মধ্যে এটা অভূতপূর্ব ব্যাপার। এটাই আসলে ক্লাসিক মিউজিকের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।’
আন্তর্জাতিকভাবে বহুল প্রশংসীত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশনকে নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ভারতের প্রখ্যাত পার্কাসোনিস্ট ও তবলা বাদক সুবেন চ্যাটার্জী। শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। যেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় আরো তিন বিখ্যাত শিল্পী পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট, পণ্ডিত কৈবল্যকুমার এবং ব্রজেশ্বর মুখার্জি।
ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীতে কিরানা ঘরানার একজন প্রখ্যাত ভোকাল পণ্ডিত কৈবল্যকুমার। উচ্চাঙ্গসংগীতের ক্যারিয়ারে যিনি চল্লিশ বছর উদযাপন করছেন এবছর। আর সেটা বাংলাদেশে। বেঙ্গলের এমন আয়োজনকে এই পণ্ডিতও উপমহাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন। এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশে এমন বিশাল পরিসরে আয়োজন আর কোথাও হয় না জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, উচ্চাঙ্গসংগীতে ঢাকার মতো এতো বিশাল পরিসরে আয়োজন ভারতে হয় না। পুনেতে যে ফেস্টিভালটা হয় সেখানে সর্বোচ্চ কুড়ি হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বেঙ্গল ফেস্টিভালকে আমার মনে হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গ সংগীতের উৎসব।
কথায় কথায় তিনি বাংলাদেশের মানুষের আতিথিয়তা নিয়েও ব্যাপক প্রশংসা করেন। বলেন, আমার ক্যারিয়ারে বহু জায়গায় পারফর্ম করেছি, কিন্তু ঢাকার মানুষের আতিথেয়তায় সত্যিই আমি মুগ্ধ। আমার ধারনা বিদেশ থেকে আগত যে কেউ আমার সঙ্গে একমত পোষণ করবেন।
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর সরাসরি ছাত্র ব্রজেশ্বর মুখার্জী। খেয়ালে তার বিশেষ পারঙ্গমতা রয়েছে। বেঙ্গলের আয়োজন নিয়ে কথা বলেন তিনিও। জানান, বেঙ্গল ফেস্টিভাল না হওয়ার ঘোষণায় খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উৎসবটা হচ্ছে শোনা মাত্রই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। কারণ আমার প্রিয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম একটি শহর। আমাকে বেঙ্গলে আমন্ত্রণ করায় তাদের অত্যন্ত ধন্যবাদ জানাই। আমার সাথে পণ্ডিত শুভংকর চ্যাটার্জী ও গৌরব চ্যাটার্জী পারফর্ম করবেন। ইন্টারনেশনালি জনপ্রিয় আর্টিস্ট তারা। উনাদের সঙ্গে গাইতে পারার জন্য নিজেকে ধন্য মনে করছি। অনুষ্ঠানে কী রাগ গাইবো এটা আগে থেকে না জানলেও মঞ্চে নিশ্চিত খেয়াল ও ঠুমরি পরিবেশন করবো।
ফেস্টিভালের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত তরুণদের উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম, বিভিন্ন ওয়ার্কশপের আয়োজন করছে এগুলো সারা বিশ্বের ক্লাসিক মিউজিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে শেখা উচিত বলে মনে করেন যন্ত্রশিল্পী সুবেন চ্যাটার্জী। বলেন,ফেস্টিভাল বলে নয়, বেঙ্গল কিন্তু সারা বছর অ্যাক্টিভ। এই বিষয়টি পুরো ভারত বর্ষের, এমনকি আমি বলবো সারা পৃথিবীতে যারা ক্লাসিক মিউজিকের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত তাদের কিন্তু এটা শেখা উচিত। বেঙ্গলে তবলার ক্লাস, যন্ত্রের ক্লাস হচ্ছে আলাদাভাবে। উল্লাসজি গানের ক্লাস নিচ্ছেন। সুরেশজি তবলার ক্লাস নিচ্ছেন। দ্বেজেন্দ্রে আর কোশল ভাই তারাও ক্লাস্ নিচ্ছেন। ফেস্টিভাল আর কনফারেন্সে কিন্তু বেঙ্গল সীমাবদ্ধ নেই। চল্লিশ হাজার মানুষ থেকে যদি চল্লিশ জনও উচ্চাঙ্গসংগীতে আগ্রহী হয়, তাহলেই আমি বলবো পারপার্স সার্ভড। আর এমনটাই ভাবছে বেঙ্গল।
‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১৭’-এর শেষ দিনের আয়োজনে প্রস্তুত মঞ্চ। ফের এক বছরের অপেক্ষায় রবিবার ভোরে রাজধানীর আবাহনী মাঠে পর্দা নামতে যাচ্ছে। শেষ দিনে যেখানে পারফর্ম করবেন বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র, পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট, ব্রজেশ্বর মুখার্জি, পণ্ডিত কুশল দাস ও কল্যাণজিত দাস এবং পণ্ডিত কৈবল্যকুমার এবং পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার মতো আন্তর্জাতিক মানের শিল্পীরা।