বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথে নতুন একটি মহাকাশযান স্থাপনে সফল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ‘জুনো’ নামের ওই স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহটি সৌরজগতের দানব গ্রহ বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে ৫ বছর আগে ২০১১ সালের ৫ আগস্ট পৃথিবী ছেড়েছিল।
সূর্য থেকে অনেক দূরে থাকায় এর আগে বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে পাঠানো মহাকাশযানগুলো নিউক্লিয়ার শক্তিতে চালিত হয়েছিল। জুনোই বৃহস্পতিতে পাঠানো প্রথম সৌরশক্তি চালিত স্যাটেলাইট। একে ব্যাপক গবেষণা করে বিশেষ ধরণের সোলার প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়।
সম্পূর্ণভাবে সৌরশক্তি নির্ভর জুনোতে বিশেষ ব্যাটারি ও রকেট ইঞ্জিন লাগানো হয় শুধু কক্ষপথ পরিবর্তন জাতীয় বিশেষ ধরণের কাজের জন্য। এই রকেট ইঞ্জিন ব্যবহার করেই সৌরশক্তির ব্যবহার ছাড়া প্রথমবারের মতো যানটিকে বৃহস্পতির মহাকর্ষ বলের মধ্যে নিয়ে তার কক্ষপথে স্থাপন করা হয়।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইঞ্জিনের মাধ্যমে গতি কমিয়ে ও গতিপথ পাল্টে টানা ৩৫ মিনিটের চেষ্টার পর কাঙ্খিত কক্ষপথে জায়গা করে নেয় স্যাটেলাইট জুনো। এরপর জুনো থেকে পাঠানো হয় নিশ্চিতকারী স্বয়ংক্রিয় রেডিও বার্তা। পরিকল্পনা মাফিক সব হওয়ার সাফল্যে উল্লাসে ফেটে পড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনায় অবস্থিত নাসার মিশন কন্ট্রোল। জুনো এখন একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে বৃহস্পতির চারদিকে ঘুরছে যার একটি ঘুর্ণন শেষ করতে পৃথিবীর হিসেবে ৫৩ দিন সময় লাগবে।
গ্যাস দানব বৃহস্পতি এখনো হাজারো রহস্যের আড়ালে ঘেরা। সেসব রহস্য উন্মোচন এবং গ্রহটির অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে ধারণা পেতেই নাসার ‘জুনো’ প্রকল্প। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, সাড়ে ৪শ’ কোটি বছর আগে কীভাবে বৃহস্পতির সৃষ্টি হয়েছিল, এই প্রকল্প সে সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন তথ্য বের করে আনবে।
এখন পর্যন্ত বৃহস্পতির এত কাছে কোনো মহাকাশযান যায়নি। এর এত কাছ দিয়ে অতিক্রম করারও সাহস পায়নি। কারণ বৃহস্পতি গ্রহ এখনো উষ্ণ। এর চারপাশে রয়েছে তীব্র রাসায়নিক বিকিরণের বলয়, যার কাছাকাছি অরক্ষিত অবস্থায় গেলে যে কোনো ধরণের ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে বিশেষভাবে নির্মিত জুনো কোনো সমস্যা ছাড়াই বৃহস্পতির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
বৃহস্পতির কক্ষপথে ঢোকার প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই নাসা মিশন কন্ট্রোল থেকে প্রকল্পের খুঁটিনাটির লাইভ ভিডিও সম্প্রচার করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।
এছাড়াও জুনো সফলভাবে কক্ষপথে অবস্থান নেয়ার পর এ নিয়ে বিশেষ একটি অ্যানিমেটেড ডুডল প্রকাশ করেছে টেক জায়ান্ট গুগল।