এক
বৃষ্টির সকালবেলায় আমার এ এম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সাহেবের কথা মনে পড়ে।
মানুষটা আমার বাবা।
বাবা মানুষটা ছিলেন খুব মাথা মোটা টাইপের।
ছোটবেলায় বুঝতাম না এই মাথা মোটা মানুষটা কিভাবে ঢাকা কোর্টের একজন জাঁদরেল উকিল হিসেবে নামডাক কামাই করেছিলেন! ঢাকা কোর্টে আমার বাবা ছিলেন খুব নামের একজন উকিল।
আমার বাবা তার জীবদ্দশায় বৈষয়িক ছিলেন না মোটেই।
যেকোনো বিষয়ে নিজে যা বুঝতেন বা মনে করতেন পৃথিবীর কোনোদিকে না তাকিয়ে তিনি শুধু সেটাই করতেন।
আমার মার কথাকে তিনি কোনোকালেই আমলে নিতেন না।
মার আদেশ উপদেশকে আমার বাবা সব সময় অতি যত্নের সঙ্গে তুচ্ছজ্ঞান করতেন, চাই কি সেসব আদেশ উপদেশকে ফুঁ-টু দিয়ে শিমুল তুলোর মতো উড়িয়েও দিতেন।
আমার মা দীর্ঘকাল বাবার এসব সইতে সইতে নিজে নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। বাবার এধরনের ব্যবহারে আমার মা কখনো কিছু বলতেন না তবে আমার মা যেটা করতেন তিনি শুধু তার মাথা মোটা স্বামীর কাণ্ডকারখানা দেখতেন আর বাচ্চামেয়েদের মতো হাসতেন। তবে তিনি তার সংসার চালাতেন নিজের মতো করে।
দুই
বৃষ্টি পড়া সকালবেলা আমার বাবা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে ছুটতেন দয়াগঞ্জ বাজারে। আমার বাবার ছিল বাজার করার দুর্দান্ত নেশা। প্রতিদিন সকালবেলা বাবা বাজার করার জন্য সূত্রাপুর-দয়াগঞ্জ- মীর হাজিরবাগ-কাপ্তানবাজার-ঠাটারিবাজার-লোহারপুলের বাজারে ছুটবেন।
আমার বাবা ছিলেন মাছ রাশির মানুষ। তরতাজা মাছ নাকি বাবার খুব পছন্দের ছিল। ভোজন রসিক ছিলেন যেমন তেমনি মানুষজনকে খাইয়ে তৃপ্তিও পেতেন অপার। নানীর কাছে শুনেছি আমার মা নাকি রান্নাও করতে পারতেন দশ হাতে!
যেদিন সকালে আকাশ মেঘে মেঘে ছাওয়া থাকত কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ত সেদিন আমার বাবা ঈদ সকালের আনন্দ নিয়ে নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে চা বানিয়ে মুড়ি দিয়ে চা খেতেন। তারপর পায়ে কালো রাবারের জুতো পড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তেন। ঘরে তখন আমরা সব ভাইবোন ঘুমিয়ে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমার বাবা প্রায় ঘুমিয়ে থাকা আমার মায়ের কানের কাছে তার বাজারে যাওয়ার বৈধতা আদায় করতেন এই বলে, ‘ঘরে তো কিছু নাই,আমি বাজারে গেলাম।’
আমার মা আর কি করবেন! তিনি বৃষ্টির সকালে তার মাথা মোটা স্বামীর কথা শোনেন আর ঘুমের মধ্যে মিটি মিটি হাসেন, ‘আরে! এই লোকের কি এক বদ অভ্যাস! প্রতিদিন এক কথা…’