আগামী বুধবার থেকে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে শেষে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস’র (বিএবি) নেতারা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের পুঁজিবাজারে যে ধ্বস নেমে এসেছে, ব্যাংকগুলোর এই বিনিয়োগের মাধ্যমে তা দ্রুতই কাঠিয়ে উঠা যাবে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে বিএবির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজার উঠেছিল, কিন্তু হঠাৎ করে করোনা ভাইরাস আসার পর ভয় পেয়ে অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তহবিল থেকে যে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে তা বিনিয়োগ করা হবে। ওই তহবিলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মতো রয়েছে।
তিনি বলেন, এখনই ওই টাকার সৎ ব্যবহার করা উচিত। প্রত্যেকটা ব্যাংক রাজি হয়ে গেছি যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে শর্তগুলো দিয়েছে, সেসব শর্ত সাপেক্ষেই বুধবার (১৮ মার্চ) থেকে আমরা শেয়ার কেনবো।
বিএবির চেয়ারম্যান বলেন, এখানে প্রায় ৫০টার মতো ব্যাংক আছে। সবাই ২০০ কোটি টাকা করে একবারে কিনবে না। ক্রমান্বয়ে কিনবে। এটা মনিটরিং করা হবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।
“হঠাৎ করে একজন ২০ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে, এটা হবে না। বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য যখন যা প্রয়োজন কেনা হবে। ৫০০ বা ৬০০ কোটি টাকার বেশি যেন শেয়ার কেনা না হয়। কারণ হুট করে ১ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনা হলো, পরের দিন ধ্বস হয়ে গেল, এটা যেন না হয়”।
এ সময় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, আস্তে আস্তে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সরকারের প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা মোটামুটিভাবে একমত। দুই-একটা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বসে বুঝে নিতে। এখানে বড় ধরনের কিছু নাই’।
ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করবে বলে আশস্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজেও।
বেঠক শেষে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে সবাই আতঙ্কগ্রস্ত। অনেকেই আছেন, পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। ১০ টাকার শেয়ার ৫ টাকায় বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। তাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা আজকে বসেছি এখানে যে, তাদের জন্য কিছু করতে পারি কি না। এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংকগুলো হলো প্রাথমিক উৎস। তারা সবাই আশস্ত করেছেন, তারা বিনিয়োগ করবেন। পুঁজিবাজারের কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন’।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যারা মুসলমান, আমাদের আল্লাহকে বিশ্বাস করা উচিত। আল্লাহ মাঝেমধ্যে এ ধরনের অশান্তি নাজিল করেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ-তায়ালা আমাদের ঈমান-আকীদা পরীক্ষা করেন। তবে আমি মনেকরি এটা সাময়িক। এই বিপদ থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মুক্ত করে দিবেন।
তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস যখন আসেনি, তখন কিন্তু মার্কেট ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেছিল। হঠাৎ করে চীনে যখন ভাইরাস হানা দিল, সাথে সাথে বাজার পড়তে শুরু করলো। এই সময়ে সবাইকে যে জোর করে রাখব, সেই ব্যবস্থা নাই।
মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের খারাপ লাগে। জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে আমাদের তো কিছু দায়িত্ব আছে। দায়িত্ব হলো সবাইকে যথাযথভাবে বলা। তারা (বিনিয়োগকারীরা) তো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পুঁজিবাজার যেন একটি জায়গায় আসে, এখন স্থিতিশীল হলে তো লাভ নাই। পুঁজিবাজারকে আগে উঠাইতে হবে। উঠিয়ে স্থিতিশীল করতে হবে’।