আখতারুজ্জামান আখতার: পাবনার বেড়া উপজেলার জাতসাখিনী ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিয়ে রাজাকার পরিবারের সন্তানকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এর প্রতিবাদে শনিবার ৪ ডিসেম্বর বিকেলে বেড়া উপজেলার জাতসাখিনী ইউনিয়নের নাটিয়াবাড়ীতে মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যান্যপ্রার্থী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং এলাকাবাসী মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেন।
সেসময় তারা অভিযোগ করে বলেন, নৌকা প্রতীক মনোনয়ন পাওয়া ওই প্রার্থী তার জীবনবৃত্তান্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মিথ্যা দিয়েও দলের সাথে প্রতারণা করেছেন।
তারা অবিলম্বে এই মনোনয়ন বাতিল করে যোগ্য প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দেয়ার জন্য দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মানববন্ধনে বলা হয়, তৃণমুলের ভোটে বিজয়ী প্রার্থীকে বাদ দিয়ে আনোয়ারা আহম্মেদ নামের একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি নয়াবাড়ী গ্রামের গণি গাড়িয়ালের নাতনি। গণি গাড়িয়াল এলাকার চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম ফজলুল হক (ফজলু মাস্টার), শাহজাহান আলী সাজু, মিজানুর রহমান রানা, এবিএম কামরুল ইসলাম। আরও বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ সদস্য আমজাদ হোসেন, আলহাজ মোকছেদ আলী মোল্লা, হাবিবুর রহমান শিকদার, মো. খাজা, মাহমুদন্নবী খাঁর বাবু, মো. সুমন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ উপজেলা নেতৃত্বের কাছে নামের তালিকা পাঠায়। পরে জেলা আওয়ামী লীগ সেই নামের তালিকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়। তাতে ১ নম্বরে ক্রমিকে নাম আসে ২৮ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম ফজলুল হকের নাম। কিন্তু সেই নাম বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ভুল তথ্য দিয়ে একটি চক্র তালিকার ১০ নম্বরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান মোছা. আনোয়ারা আহম্মেদকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়।
এ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মাস্টার বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমরা নাটিয়াবাড়ীতে ক্যাম্প করেছিলাম। সেসময় রাজাকার গণি গাড়িয়াল এর বাড়ি থেকে লুট করা টিন ও খাদ্যদব্য উদ্ধার করেছিলাম।
‘‘এটা এলাকার সবাই জানেন। দলের মনোনীত অনোয়ারা আহম্মেদ স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান। শুধু তাই নয়, তিনি জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করেছেন তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এ পদে রয়েছেন শ্রীমতি সুসমা রানী।”
তিনি আরও বলেন, ‘অনোয়ারা আহম্মেদের দাদা রাজাকার আর তিনি প্রতারক। প্রতারণার কারণে তার দলীয় শাস্তি হওয়া দরকার।’
‘‘অর্ধ লাখ ভোটারের জাতসাখিনী ইউনিয়নের ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। আর এটার জন্য রাজাকারের নাতনির মনোনয়ন বাতিলের বিকল্প নেই। আনোয়ারা আহমেদ মনোনয়ন পাওয়ায় ভোটারদের মন ভেঙে গেছে। এতে দলীয় কোন্দল ও বিভাজন তৈরি হতে পারে। প্রকৃত আওয়ামী লীগের যে কাউকে মনোনয়ন দেয়া উচিত।’’
মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক প্রার্থী শাহজাহান আলী সাজু বলেন, জেলা থেকে কেন্দ্রে পাঠানো নামের তালিকায় তার নাম ছিল ২ নম্বরে। কিন্ত তিনি মনোনয়ন পাননি। অথচ অনোয়ারা দলের কোনো কার্যক্রমের সাথে জড়িত না হলেও প্রতারণামূলকভাবে মহিলা সম্পাদক পরিচয় দিয়ে মনোনয়ন হাতিয়ে নেন। তিনি হাইব্রিড আওয়ামী লীগ সেজে ও প্রতারণা করে মনোনয়ন পেয়েছেন। তাকে বাতিল করে প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান।
জাতসাখিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান রয়েছেন অনেকেই। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দাবি করি প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের মনোনয়ন দেয়া হোক।
এলাকার ৯৫ বছর বয়সী আলহাজ্ব মোকছেদ আলী মোল্লা জানান, এটা ঠিক যে, আনোয়ারা আহমেদ এর দাদা একজন রাজাকার ছিলেন। তাই প্রকৃত বঙ্গবন্ধু ভক্তদের নৌকা দেয়া উচিত।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদন্নবী খাঁন বাবু বলেন, নৌকা পাওয়া আনোয়ারা আহমেদ আওয়ামী লীগ করেন এটা এলাকার কেউ জানেন না। হঠাৎ করে তিনি আওয়ামী লীগ সেজে দলীয় পরিচয় প্রতারণা করে নৌকা প্রতীক নিয়ে এসেছেন।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারা আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সত্য নয়। দলীয় গ্রুপিংয়ের জন্য তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে।
দলীয় পরিচয়ে প্রতারণা করেছেন-এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জানান, তিনি একটি মিটিং- এ ব্যস্ত আছেন।
মোছাঃ আনোয়ারা আহম্মেদ স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জাতসাখিনী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হেলাল উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, ‘আনোয়ারা আহম্মেদের দাদা গনি গড়িয়াল স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির হয়ে লুটপাটে জড়িত ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর তার বাড়ি থেকে লুটের টিনসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করে মুক্তিযোদ্ধারা। এটা শতভাগ সত্য তিনি স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান। দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক ঘটনা হলো তার পরিবারের সন্তানের কাছেই আজ বীর মুক্তিযোদ্ধারা পরাজিত।’