হঠাৎ করেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে নেমে এসেছে অচলাবস্থা। ১১ দফা দাবিতে একাট্টা দেশের সব ক্রিকেটার। দাবি না মানলে ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি সাকিব-তামিম-মুশফিকদের কণ্ঠে। সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে তারা জানান, দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের সার্বিক উন্নয়নের কথা ভেবেই নানা দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন সকলে।
সোমবার বিসিবির কাছে ১১টি দাবি একে একে উপস্থাপন করেন নাঈম ইসলাম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, এনামুল হক জুনিয়র, এনামুল হক বিজয়, নুরুল হাসান সোহান, ফরহাদ রেজা ও জুনায়েদ সিদ্দিকী।
যে ১১ দাবি
১. আমরা যতুটুক সম্মান পাওয়ার যোগ্য আমার মনে হয় না সেটি আমরা পাই। আমাদের খেলোয়াড়দের উন্নয়নের যে অ্যাসোসিয়েশন আছে (ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- কোয়াব) আমরা কখনো দেখিনি ওনারা আমাদের পক্ষে কথা বলেছেন। অতএব কোয়াবের প্রেসিডেন্ট (নাঈমুর রহমান দুর্জয় ), সেক্রেটারি (দেবব্রত পাল) যারা আছেন তাদের অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আমাদের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি কে হবেন সেটা আমরা খেলোয়াড়রা নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করব।
২. বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে আপনারা জানেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের অবস্থাটা কী। যেভাবে প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে তাতে সব খেলোয়াড়ই অসন্তোষ প্রকাশ করছে। পারিশ্রমিকের একটা মানদণ্ড বেধে দেয়া হচ্ছে এবং অনেক সীমাবদ্ধতা এখানে আছে। আমরা যেভাবে আগে প্রিমিয়ার লিগ খেলতাম এবং ক্রিকেটাররা যেভাবে ক্লাব অফিসিয়ালদের সাথে ডিল করত সেটা এখন আর নেই। আমাদের দাবি হচ্ছে আগে যেভাবে প্রিমিয়ার লিগটা চলত সেভাবে যেন আমরা পাই।
৩. আমাদের তৃতীয় দাবি বিপিএল নিয়ে। আপনারা জানেন এবারের বিপিএল অন্য নিয়মে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের যেটা মূল দাবি হল বিপিএল যেন আগের নিয়মে চলে আসে এবং আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়দের ন্যায্য মূল্যটা যেন বিদেশি প্লেয়ারদের সাথে থাকে। আমরা দেখি যে বিপিএলে বিদেশি প্লেয়াররা আসে এবং তাদের অনেক পারিশ্রমিক দেয়া হয়। কিন্তু স্থানীয়রা সেটা পায় না। বিসিবিকে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। আপনারা যদি খেয়াল করে দেখন বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে যে যে প্লেয়ার তারা নিলামেই নিশ্চিত করে যে কোন গ্রেডে থাকবে। আমার মনে হয় আমাদেরও সেই সম্মানটা দেয়া উচিত।
৪. আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের বেতন ১ লাখ টাকা হওয়া উচিত। আমরা এই দাবিটা অবশ্যই জানাচ্ছি। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বেতন অনেক কম। সেটা কমপক্ষে ৫০ ভাগ বাড়াতে হবে। অনুশীলন সুবিধা বাড়াতে হবে। জিম, ইনডোর, মাঠ সবকিছুর সুবিধা বাড়াতে হবে। ১২ মাস কোচ, ফিজিও, ট্রেনার নিয়োগ দিতে হবে। আমরা চাই এটা আসছে মৌসুমের আগেই নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই না প্রতিটি অনুশীলনই ঢাকাতে হোক। ঢাকার বাইরে বরিশাল তাদের হোম ভেন্যুতে, খুলনা তাদের হোম ভেন্যুতে অনুশীলন করবে তাহলেই ক্রিকেটের প্রসার বৃদ্ধি পাবে।
৫. আমরা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যে বল দিয়ে খেলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই বল দিয়ে খেলা হয় না। ফলে আমাদের নতুন করে বলের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এই জিনিসটা যেন আমাদের না করতে হয়।
৬. জাতীয় লিগে ডেইলি অ্যালাউন্স বাবদ আমাদের ১৫শ টাকা দেয়া হয়। আমার মনে হয় না এটা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত। যে ফিটনেস লেভেল বিসিবি প্লেয়ারদের থেকে দাবী করে মনে হয় না সেটা ১৫শ টাকায় সম্ভব। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে এবং ভালো হোটেলে থাকতে হবে। সেটা বিবেচনা করে যে টাকা দিলে ভালো হয় বিসিবি সেটা যেন করে।
খেলোয়াড়দের যাতায়াত, এটা বড় একটি ইস্যু। ভ্রমণ বাবদ যে টাকা দেয়া হয় সেটা পর্যাপ্ত না। আমাদের ২৫শ টাকা দেয়া হচ্ছে এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে ভ্রমণ বাবদ। আপনারা বলতে পারেন ২৫শ টাকায় বাস ছাড়া অন্য কোনোভাবে সে পৌঁছাতে পারে? অতএব বিসিবি থেকে যেন বিমান ভাড়া দেয়া হয় সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
হোটেলে জিম এবং সুইমিং পুল অবশ্যই থাকতে হবে। কারণ চার দিনের ম্যাচ শেষে প্রতিটি খেলোয়াড়ের অনেক কষ্ট হয়। তো এখানে অবশ্যই রিকভারির জায়গা থাকতে হবে। টু স্টার বা থ্রি স্টার হোটেলে থাকা সম্ভব নয়।
আপনারা দেখেন আমরা কি বাসে চলাফেরা করি। এটা প্লেয়ারদের জন্য একবারেই আরামদায়ক নয়। এতএব একটা এসি বাস অবশ্যই যেন থাকে।
জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ প্লেয়ারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাপী যদি আপনারা চিন্তা করেন আমার মনে হয় আমাদের চুক্তিভুক্ত প্লেয়ারের সংখ্যা কম। আমার মনে হয় চুক্তিভুক্ত প্লেয়ারের সংখ্যা ৩০ জন করা উচিত। এবং করতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের বেতন বাড়াতে হবে। তিন বছর যাবত আমাদের বেতন বাড়ানো হয় না। অতএব বেতনও বাড়াতে হবে।
৭. আমাদের গ্রাউন্ডস ম্যান, কোচ মাস শেষে অনেক কম টাকা বেতন পায়। বিদেশি প্লেয়াররা যে বেতন পায় সে তুলনায় আমাদের স্থানীয়রা বেতন খুব কম পায়। আমাদের আম্পায়ার, ফিজিও ও ট্রেনারদেরও একই অবস্থা। অতএব তাদের বেতনও বাড়ানো উচিত।
৮. ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা দুই ধরনের লঙ্গার ভার্সন খেলি বিসিএল ও এনসিএল। কিন্তু ওয়ানডেতে আমরা একটা মাত্র ভার্সন খেলি। এই সংখ্যাটি আরও বাড়ানো উচিত। টি-টুয়েন্টিতে আমরা বিপিএল নামক মাত্র একটি টি-টুয়েন্টি লিগ খেলি। আমার মনে হয় বিপিএলে আরও ভালো করতে অন্তত আরও একটি টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলা উচিত। জাতীয় লিগে আমরা আগে একটি ওয়ানডে খেলতাম। যা এখন আমরা পাই না। সেটা বাড়ানো হোক।
৯. ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য একটি নির্ধারিত ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। এটা হলে আমরা আগে থেকে আমরা থেকে প্রস্তুতি নিতে পারি।
১০. প্রিমিয়ার লিগে যে বকেয়া সেটা যেন ক্লিয়ার করা হয়। প্রতিবছর যে সময়টা দেয়া থাকে তার মধ্যে যেন ক্লিয়ার করা হয়।
১১. ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে একটি নিয়ম করে দেয়া হয়েছে যে, দুই লিগের বেশি খেলতে পারব না। সেই জায়গায় আমারা যদি জাতীয় দলের বাইরে ফ্রি থাকি এবং আমাদের যদি ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে আমরা কয়েকটি ম্যাচ বেশি খেলতে পারব।