মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ভয়ে পালিয়ে এসেছিল পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা এদেশে। আশ্রয় নিয়েছিল কক্সবাজারের আশেপাশের এলাকাগুলোতে। বাংলাদেশের সরকার তাদের মানবিক কারণেই আশ্রয় দিয়েছে। তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে বহু এনজিওসহ সমাজের নানা শ্রেণীর মানুষ। এমনকি রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গও।
কিন্তু এদেশে এসেও কি রোহিঙ্গা নারী-শিশু বা কিশোরীরা ভালো আছে? ভালো থাকার কথা না। নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে উদ্বাস্ত জীবন, নেই ঠিকমত খাওয়া-পরার নিশ্চয়তা। যোগ হয়েছে নতুন আতঙ্ক। দালালদের নজর পড়েছে তাদের ওপর। যেকোনো সময় নানা কৌশলে উঠিয়ে নিয়ে হোটেলে বিক্রি করে দেয়া হতে পারে, বিদেশীসহ এদেশের বিকৃত রুচির মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য।
বিষয়টা কতটা অমানবিক। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানে এমন একটি খবর বেরিয়েছে পত্রপত্রিকায়, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরের কিশোরী মেয়েদের যৌনকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে। দালালরা কক্সবাজারের ছোট ছোট হোটেলগুলোতে এসব কিশোরীদের বিক্রি করে দিচ্ছে। বিষয়টা সত্যই উদ্বেগের।
এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমার সরকারের নানা রকমের মায়া কান্না থাকলেও আদতে তারা কখনো তাদের ফিরিয়ে নেবে না, এটাতো তারা নানা ধরনের টালবাহানা করে বুঝিয়েই দিচ্ছে। পক্ষান্তরে এরা বাংলাদেশের জন্য সারা জীবন গলার কাটা হয়েই থাকবে। যতই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে বাহবা বা মানবিক বলুক না কেন বিদেশী মোড়লরা এর সুরাহা করতে পারবে না। যার খেসারত দিতে হবে বাংলাদেশকেই।
কিভাবে খেসারত দিতে হবে? রোহিঙ্গারা এখন নিরুপায়। তাদের এখন আর কিছু হারাবার ভয় নেই। প্রাপ্তিরও কোনো আশা নেই। তাদেরকে খুব সহজেই মোটিভেট করা সম্ভব। নানা রকমের প্রলোভনে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির কাজে ব্যবহার করা যাবে। খুন-খারাবি থেকে যেকোনো রাজনৈতিক সংকটে তাদের আগে রেখে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা সহজ হবে। আর সে সুযোগটা নেবে রাজনৈতিক দলগুলো। এবিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকারকে এখন জোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বিশ্ববাসী জানবে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিলেও সম্মান রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তখন আবার নতুন যন্ত্রণা শুরু হবে। বিশ্ব মোড়লরা বিষয়টা নিয়ে লাফালাফি শুরু করবে। যারা কোনো সুরাহা করতে পারেনি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায়, যারা পারেনি মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিয়ে তাদেরকে ফেরত নেয়ার, তারা মেতে উঠবে অন্য খেলায়। যেটার খেসারত হয়ত বাংলাদেশকে দিতে অন্যভাবে। কথায় বলে না ‘গরিবের দোষ পদে পদে’ এই প্রবাদটা তখন বাংলাদেশের কপালে চিরস্থায়ী হয়ে যাবে। আশ্রয় দিয়ে বিপদ ডেকে আনার মত আর কি!
সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সচেতন মানুষের সহায়তা প্রয়োজন। তা না হলে এটা মোকাবিলা সম্ভব না। কখন কোন কিশোরী বা তরুণীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কে বা কারা, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে ভূমিকা রাখা খুবই জরুরি। কারণ এভাবে যদি রোহিঙ্গা নারীদের যৌনকর্মে ব্যবহার করা হয় এর প্রভাব পড়বে সমাজের ওপর। কারণ সরকার চাচ্ছে এরা যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। ছড়িয়ে পড়লে দেশের জন্যই বিপদ।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে এখনই জোর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। কারা এই কাজে জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। যাদেরকে অসহায় ভেবে আশ্রয় দেয়া হয়েছে আপাতত তাদের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব তো সরকারকে নিতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)