চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বিশ্রাম নিয়ে ‘মনের সব কথা’ জানালেন সাকিব

ছয় মাসের বিশ্রাম চাওয়ার পর মিলেছে কেবল সাউথ আফ্রিকা সফরের দুই টেস্টে। তাতেই সাকিব আল হাসানকে নিয়ে নানা রকম কথা হচ্ছে। একই সময়ে টি-টুয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেট খেলবেন বলে প্রশ্ন উঠছে, কেন টেস্ট থেকেই শুধু বিশ্রামে তিনি। নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে সাকিব খুলে দিলেন মনের দুয়ার। জানালেন বিশ্রাম সম্পর্কিত মনের সব কথাই।

যে যাই বলুক, সমালোচনা যেভাবেই করুক, সাকিব সহাস্যেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্রাম তত্ত্বের। ক্যারিয়ার লম্বা করতেই এই বিশ্রাম বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের, ‘আমার আরও অনেকদিন খেলার বাকি আছে। এই সময়ে যদি ভালো খেলতে চাই, তাহলে বিশ্রামটা জরুরি ছিল। চাইলেই খেলতে পারি। এখন আপনারা কী চান? ৫-৬ বছর খেলি, নাকি দুই বছর খেলি! যদি এভাবে খেলতে থাকি, এক-দুই বছর পরেই ওভাবে আর খেলতে পারব না। এভাবে খেলার চেয়ে না খেলাই ভালো। যতদিন খেলব যেন ভালোভাবে খেলতে পারি সেটাই আমার লক্ষ্য।’

জাতীয় দলের বাইরে টি-টুয়েন্টি লিগে বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলেন সাকিব। টানা ক্রিকেট খেলে ক্লান্ত তিনি। বিশ্রামের পর তাই তরতাজা হয়েই ফেরার আশা, ‘বিরতিটা যদি পাই, শারীরিকভাবে না যতটা মানসিকভাবে আরও বেশি সতেজ হয়ে ফিরতে পারব। তাতে হয়ত পরের পাঁচ বছর চিন্তামুক্ত হয়ে খেলা সম্ভব হবে। যেটা মনে করি, এক-দুই ম্যাচ বা এক-দুই মাসের চেয়ে এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

নানামুখী প্রশ্নের উত্তরে টি-টুয়েন্টি এবং ওয়ানডের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের একটা পার্থক্য টেনেছেন সাকিব। টেস্টে অনেক বেশি সময় ব্যস্ত থাকতে হয় বলে বিশ্রামটা এই ফরম্যাটেই, ‘সীমিত ওভারের ক্রিকেট একদিন কিংবা তিন ঘণ্টার হয়। টেস্ট পাঁচ দিনের হয়। এটার জন্য প্রস্তুতি আরও ১০-১৫ দিনের। একটা টেস্ট সিরিজ যদি বিশ্রাম নেন, এক মাসের বিরতি মেলে। টি-টুয়েন্টি সিরিজ থেকে বিশ্রাম নিলে তিন দিনের বিরতি। ওয়ানডে সিরিজ তো সাত দিনে শেষ হয়। আমার একটু বড় বিরতি দরকার। টেস্টে বিরতি নেয়াটা সে কারণেই।’

বিশ্বের অনেক বড় বড় খেলোয়াড় লংগার ভার্সন ছেড়ে শর্টার ভার্সনে স্থায়ী হয়েছেন। যার কারণে বিস্তর সমালোচনাও সইতে হয়েছে তাদের। এনিয়ে সাকিব বললেন, ‘আমার শরীর আমিই ভালো বুঝব। এই যে ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টিতে বিশ্রাম নিলাম না, বা বাইরের কোনও টি-টুয়েন্টিতে কেন বিশ্রাম নিলাম না, এই প্রশ্নগুলো যখন আসে অবাকই লাগে। বাইরের টি-টুয়েন্টিতে কোনও চাপ নেই। অনেকটা ছুটি কাটানোর মতোই। সঙ্গে একটা অভিজ্ঞতাও হয়ে যায়। আর্থিক দিকটা অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

‘টেস্টে যেহেতু ব্যাটিং-বোলিং দুটিই করি। চার ইনিংসেই আমাকে অবদান রাখতে হয়। অর্ধেক দিলাম, অর্ধেক দিলাম না। তাহলে দলের চাহিদা পূরণ করতে পারলাম না। যখন চারটি ইনিংসে দুইবার বোলিং দুইবার ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারব, তখনই সেরা সময় খেলার। আমি চাইলেই খেলতে পারি। ম্যাচ ফি পাব, বেতন পাব। কিন্তু এভাবে খেলাটা মনে হয় না আমার কাছে খুব গুরুত্ব বহন করে।’ সাকিবের সোজাসাপ্টা জবাব ছিল এমনই।

দলের অন্য কেউ যদি সাকিবের মত ক্লান্তির কথা ভাবে তাদের প্রতিও পরামর্শ থাকল টাইগার তারকার, ‘যদি কখনও কারও মনে হয় যে আমার আসলে খেলা বেশি হয়ে যাচ্ছে বা বেশি খেলেছি, একটি বিরতি দরকার, আমি মনে করি তাদের অবশ্যই মন থেকে বলা উচিত। এটায় বরং তাদের ক্যারিয়ারের জন্য আরও ভালোই হতে পারে।’

দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকে সাকিবের চাওয়ার সঙ্গে একমত। পাশাপাশি তারা এটাও বলছেন যে, ভবিষ্যতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটও যেন বেছে বেছে খেলেন সাকিব। এ বিষয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরলেন সাকিব, ‘আপাতত এ বিষয়ে আমার ভাবনা নেই। তাদের ভাবনা তাদের কাছে থাক, তারা যেটা মনে করল…! ওই যে বললাম না, লোকের ধারণা একেকরকম হবেই। সেসব নিয়ে চললে আমার জন্য লাভজনক বা ভালো কিছু হবে না। আমার চিন্তাটা আমিই করি। আমার চিন্তা আমি করলেই সব থেকে ভালো হয়। আমি যেন ভালোভাবে চিন্তা করতে পারি, এই সাপোর্টটা আপনারা করবেন।’

ছবি: সাকিব উল ইসলাম