চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

“বিশ্ব শান্তি দিবস” পৃথিবী হোক শান্তিময়

সুন্দর ও মানবিক জীবন যাপনের জন্য মানসিক ‘শান্তি’ মানুষকে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে অদৃশ্য ভাবে প্রেরণা যোগায়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে সকল মৌলিক বিষয় গুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে ‘শান্তি’ অন্যতম।

বেঁচে থাকার অভিলাষে, একটু সুখ বা শান্তির সন্ধানে মানুষকে ছুটে বেড়াতে হয় চেনা-অচেনা কতো পথ! সম্মুখিন হতে হয় হরেক রকম পরিস্থিতির। আর হয়তো সে কারণে-ই সেপ্টেম্বর মাস আমাদের জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্য পূর্ণ মাস। কেননা এই সেপ্টেম্বর মাসেই মানবতার ব্রত নিয়ে জাতিসংঘ তাদের মহান যাত্রা শুরু করেছিলো।

১৯৮১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ঘোষণা করে যে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তির জন্য উৎসর্গ করা এবং পালন করা উচিৎ ‘বিশ্ব শান্তি দিবস’ হিসেবে।

এই দিনটিতে সবাই একাগ্র হবে বিশ্বের দেশসমূহ ও মানুষের মধ্যে শান্তির আর্দশ প্রতিষ্ঠায় এবং সুদৃঢ় করণে (সিদ্ধান্ত ৩৬/৬৭)। ১৯৯৮ সালের ৪ জুনে সাধারণ পরিষদ পুণরায় নিশ্চিত করে যে শান্তির জন্য জাতিসংঘের অব্যাহত প্রয়াস স্মরণে প্রতি বছর পূর্বের ন্যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক নিয়মিত অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনটি হবে বিশ্ব শান্তি দিবস (সিদ্ধান্ত ৫২/১৩২)।

২০০০ সালের সাধারণ অধিবেশনের সহস্রাব্দ সম্মেলন উদ্ধোধন হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বর। সেই ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর-এর তৃতীয় মঙ্গলবার সারা বিশ্বে শান্তি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ জন্মলগ্ন থেকে বিশ্বের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সফলতা ও ব্যর্থতা দুটো-ই সাথে নিয়ে বিশ্ব সমাজের উপর শান্তির ছায়া দেয়ার আন্তরিক কার্যকর তৎপরতায় নিয়োজিত এ ধরণের সংগঠন আর দ্বিতীয়টি নেই। এই সংগঠনের সকল কর্মতৎপরতা-ই শান্তির জন্য এবং শান্তির প্রসারের জন্য। কুটনীতি এবং বির্তকের কেন্দ্র হিসেবে জাতিসংঘ প্রদর্শন করে যুদ্ধের বিকল্প পথ এবং তুলে ধরে শান্তিপূর্ণ মিমাংশার পদ্ধতি ও কাঠামো।

আন্তর্জাতিক সংকটকালে উত্তেজনা প্রশমনে ঝাপিঁয়ে পড়ে এবং সৃষ্টি করে আলোচনার সুযোগ। সশস্ত্র সংঘর্ষের অবসান যারা চায় জাতিসংঘ তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক আইন কাঠামো প্রণয়নের মাধ্যমে মানবাধিকার সংরক্ষণের দ্বারা জাতিসংঘ ব্যবহার করে কুটনৈতিক নিবারক। জাতিসংঘ সহযোগিতা করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণতন্ত্রায়ণে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘ যুদ্ধের নেপথ্য কারণ বা উৎসসমূহ নির্মূল করে এবং শান্তিকে সংরক্ষণ করার কৌশল বাস্তবায়ন করে। পাশাপাশি মানবিক সাহায্য, শরণার্থী প্রত্যাবর্তন, জাতীয় অবকাঠামো মেরামত এবং পূর্ণগঠনে জাতিসংঘ সহযোগিতা করে এবং নির্মাণ করে শান্তির ছবি।

জাতিসংঘ সনদের ঘোষণায় বলা হয়েছে, জাতিসংঘ অর্ন্তভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের জনগণ সম্মিলিতভাবে শান্তিতে বসবাস এবং আর্ন্তজাতিক শান্তি ও সংরক্ষণে তাদের সকল শক্তি-সামর্থ সমন্বিত করতে সংকল্পবদ্ধ। সনদে বিশ্ব শান্তি ও সংরক্ষণ এবং বিরোধ নিস্পত্তির প্রাথমিক দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের উপর অর্পিত। নিরাপত্তা পরিষদ মধ্যস্থতা, প্রভাব খাটনো ও নিস্পত্তি প্রয়াস, সামরিক পর্যবেক্ষক ও শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে এই দায়িত্ব সরাসরি পালন করে। জাতিসংঘ সনদের ১১ ধারা অনুযায়ী বিশ্ব শান্তির অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় আদর্শ বা নীতিমালায় স¤প্রসারণ করে সাধারণ পরিষদ। সাধারণ পরিষদ শুরু থেকে-ই শান্তি সংরক্ষণ সম্পর্কিত নীতিমালা সমূহ উদ্বোধন করে চলেছে।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিশ্ব শান্তি রক্ষার প্রয়াস জোরদার করে তোলা, বিরোধ সমুহের শান্তিপূর্ণ নিস্পত্তি এবং আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে বহু সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা। এইসব সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা কখনো ছিলো কার্যকর আবার কখনো বা অকার্যকর! কিন্তু জাতিসংঘ তাদের কাজের মাধ্যমে স্বীয় লক্ষ্যে পৌছাতে সদা তৎপর।

১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের এক ঘোষণায় বলা হয়, স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত নীতিমালার প্রতি অশ্রদ্ধাই আর্ন্তজাতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী। বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তে নিন্দা করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের, আহ্বান জানানো হয়েছে। আগ্রাসনধর্মী তৎপরতা থেকে বিরত থাকার, বারবার প্রকাশ প্রকাশ করা হয় উত্তেজনার কারণ ও ফলাফল মুছে ফেলে বিশ্ব শান্তির রক্ষার ভূমিকা জোরদার করার। সংকল্প এবং স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় যে, বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ ও শক্তিশালী করে তোলার ভিত্তি ভূমি হলো বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সমতা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার পারষ্পারিক নির্ভরতা ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জাতিসংঘের একটি উলে­খযোগ্য পদক্ষেপ হচ্ছে ১৯৮০ সালে ‘সান জোম্বে কোষ্টারিকায়’ শান্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। সেই সাথে বার্ষিক উদ্বোধনের দিনকে আর্ন্তজাতিক শান্তি দিবস ঘোষণা।

নিরন্ত্রীকরণ তৎপরতা, স্থল আইন নির্মূল অভিযান, বিভিন্ন দেশের সৈনিক, বেসামরিক পুলিশ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, মাইন পরিস্কারক, মানবাধিকার পর্যবেক্ষক, বেসামরিক প্রশাসন, ও যোগাযোগ বিষয়ক অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ সমন্বিত শান্তি রক্ষা কার্যক্রম স¤প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আইনগত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপসহ শান্তি প্রসারে একটি নিরাপদ পৃথিবীর জন্য জাতিসংঘের কার্যক্রম বিশাল ও ব্যপক। সফলতা ও ব্যর্থতার স্বাক্ষী হচ্ছে দীর্ঘ ইতিহাস।

মানুষ সৃষ্টির জীব হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। মেধা ও মননের যৌথ সমন্বয়ের ফলে-ই এটি সম্ভব হয়েছে। একটি কথা অনম্বীকার্য যে জাতিসংঘের কাছে এমন কোন জাদুমন্ত্র নেই যা দিয়ে জাতিসংঘ শান্তির আবেশে ভরিয়ে দিতে পারে পৃথিবী। অথবা এমন কোন শক্তি নেই যা দিয়ে সে ছড়িয়ে দিতে পারে দেশে দেশে শান্তির সুবাতাস। প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘের কার্যকারিতা নির্ভর করে এর সদস্য ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সদচ্ছিার ওপর।

জাতিসংঘের প্রয়াস সবাইকে নিয়ে একটি নিরাপদ সংঘাতমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলা। আমাদেরও প্রত্যাশা ‘বিশ্ব শান্তি দিবস’ মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে শান্তির দিকে ধাবিত হতে। আমাদের মনে রাখতে হবে আজকের পৃথিবী আগামীর ভবিষ্যৎ।

সুতরাং আমরা কি পারি না, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি দূষণ মুক্ত শান্তির পৃথিবী উপহার দিতে চেষ্টা করতে? সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় পৃথিবী হোক শান্তিময়, চির সুখের আবাসস্থল, সেটাই কাম্য।