দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর নিজস্ব নিয়ম-কানুন ও সুবিধার সুযোগ নিয়ে নানা অনিয়মের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপাচার্য আলোচনায় এসেছেন। কখনও অফিস না করেই বেতন নেয়া, অনৈতিকভাবে নিয়োগ, নয়তো ঠিকাদারি কাজের কমিশন সংক্রান্ত বিষয়! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিতর্ক যেন চিরসঙ্গী।
সম্প্রতি আলোচনা-সমালোচনায় এসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য আবদুস সোবহান, তার শেষ কর্মদিবসে ১৪১ জনকে নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাসে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে, শেষ কর্মদিবসে পুলিশী পাহারায় ক্যাম্পাস ছেড়েছেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য। আলোচনায় আসছে বিতর্কিত আরও এক নিয়োগের ঘটনা। ২০০৪ সালে তৎকালীন উপাচার্য ফাইসুল ইসলাম ফারুকী ৫৪৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই নিয়োগ নিয়েও তখন চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। মামলা হয়েছিল। ওই ৫৪৪ জনের মধ্যে শ’ দেড়েক কর্মচারীর নিয়োগ আজও পাকাপোক্ত হয়নি। তারা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশ সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, এবার নিয়োগ পাওয়া ১৪১ জনের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান, স্ত্রী ও স্বজন, ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী, সাংবাদিক নেতাসহ চারজন সাংবাদিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩–এর ১২(৫) ধারায় তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
দেশের উচ্চশিক্ষার স্থান হিসেবে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের ও শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক কল্যাণের স্বার্থে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই নানা কারণে এই ক্ষমতার অপব্যবহার হতে দেখা যায়। অনেকে প্রশ্ন তোলেন এই স্বায়ত্তশাসনের, কিন্তু এটা না থাকলেও আবার রাজনৈতিক ক্ষমতার নগ্ন হস্তক্ষেপের শঙ্কা রয়ে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানের অবনমন, গবেষণা সুযোগের অপ্রতুলতা ও শিক্ষক নিয়োগসহ নানা বিষয়ে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই আলোচনার মুখে। এই অবস্থা জাতির জন্য মোটেও সুখকর না। যেভাবেই হোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেতিবাচক কর্মকান্ড বন্ধ হওয়া উচিত, সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষক ও প্রশাসনের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আমাদের আশাবাদ, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।